আরাফাত হাসান
করোনার কারণে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে দেশগুলোর সরকার। যুক্তরাজ্যেও হানা দিয়েছে করোনা,ইতোমধ্যেই দেশটিকে লকডডাউন ঘোষনা করেছে দেশটির সরকার । কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে ঘটলো খানিক উল্টো ঘটনা। সময়ের আগেই মেডিকেল শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করেছে কর্তৃপক্ষ। মূলত সামনে থেকে করোনা মোকাবেলায় মেডিকেল শেষ বর্ষের শীক্ষার্থীদের এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনা প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার উপর যে চাপ পড়েছে তাতে সময়ের আগে এ উদ্যোগ নিতে অনেকটা বাধ্য হয়েছে দেশটির মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষা না নিয়েই মেডিকেল শেষ বর্ষের শীক্ষার্থীদের স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে।
সাধারণত যুক্তরাজ্যে জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল কর্তৃক মেডিকেল শীক্ষার্থীদের স্নাতক ডিগ্রী প্রদানের অনুমোদন দেয়া হয় আগষ্ট মাসে। অন্যদিকে জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিলের অনুমোদন ব্যথিত কোনো মেডিকেল শিক্ষার্থী ডাক্তারের দায়ীত্ব পালন করতে পারেনা। মূলত এই কারণের তাদের স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে। নতুন ডাক্তারগুলো একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতো ক্লিনিকেল সেবা দিতে না পারলেও তারা করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোতে সাহায্য করতে পারবেন বলে বিশ্বাস কর্তৃপক্ষের। অবশ্যয় জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল জানিয়েছে তারা এ নিয়ম চালু রাখতে চায় না, তবে এমন নিয়ম চালু রাখার জন্য কিছুটা চাপ আসতেও পারে।
ল্যানকাস্টার, নিউক্যাসল এবং ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাঞ্জলিয়া ইতোমধ্যে তাদের শেষ বর্ষের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করেছে। এছাড়াও অক্সফোর্ড এবং কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের শেষ বর্ষের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করার পরিকল্পনা করছে বলে ধারণা করেছে গার্ডিয়ান । ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাঞ্জলিয়ার একজন মুখপাত্র বলেন, “কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে আমাদের মেডিকেল শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই কঠিন সময়ে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা’র কর্মীদের সাহায্য করার জন্য মেডিকেল শিক্ষার্থীরা জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা’য় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে পারে। তারা একজন যোগ্য চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম না হলেও আমরা শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছি তারা যেন সুরক্ষিত থেকে অবশ্যই তাদের যোগ্যতার মধ্যে কাজ করে। কিছু শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে স্বেচ্ছাসেবি হিসেবে যোগ দিয়েছে। আমরা তাদের জন্য সত্যিই গর্বিত। ”
লিভারপুল ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে তাদের পঞ্চম বর্ষের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং চুড়ান্ত পর্যায়ে সকল ক্লিনিকেল প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। যুক্তরাজ্য মেডিকেল শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠনের নেতা জুলিয়া সিমনস বলেন, “শীক্ষার্থীরা সাহায্য করতে আগ্রহী,কিন্তু তাদের ঠিক কী করতে হবে সে সম্পর্কে তারা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছেনা। তাছাড়া তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনাও নেই।” মেডিকেল স্কুল কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “যে শিক্ষার্থীরা অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় মান এবং ফলাফল অর্জন করেছে তাদের স্নাতকোত্তর এগিয়ে আনা হয়েছে, যাতে তারা বর্তমান সংকটে সহায়তা করতে পারে। মেডিকেল পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী যারা ক্রমাগত ভালো ফলাফল করে আসছে, তাদের মূল কর্মীদের সাথে মিলিত করা হয়েছে।”
জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল (জিএমসি) এর একজন মুখপাত্র বলেছেন, “এখন আমদের অস্থায়ী নিবন্ধনের জন্য স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি পরিবর্তন করার পরিকল্পনা নেই। চূড়ান্ত-বর্ষের শিক্ষার্থীদের এপ্রিল মাসে আবেদনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং আমরা আমাদের নিয়মিত পদ্ধতি অনুসরণ করব, যাতে তারা আগস্টে কাজ শুরু করতে পারে ।” তিনি আরো বলেন, “স্বেচ্ছাসেবি শিক্ষার্থীদের নিরাপদে থাকতে হবে এবং তাদের যোগ্যতার মধ্যে থেকে কাজ করতে হবে। তাদের অবশ্যই ডাক্তারের কোনও দায়িত্ব পালন করতে হবে না। ” বৃটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মেডিকেল ছাত্র কমিটির সহ-সভাপতি গুরদাস সিং এবং ক্রিস স্মিথ বলেছেন, শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর হওয়ার পরে জুনিয়র ডাক্তার হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে, তবে তাদের নিবন্ধনের ব্যাপারটা জিএমসি’র উপর নির্ভর করবে।তারা আরও বলেন, “আমরা স্নাতক হওয়ার আগে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় চাকরী করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের যথাযথা সুরক্ষা ও সমর্থন নিশ্চিতকরণ এবং তাদের যোগ্যতার চেয়ে বড় কোনো দায়ীত্ব না নির্ধারণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।”
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এমডি/ এমএইচ/ বাংলাবার্তা