করোনা থেকে আমাদেরকে বাঁচাবে কে? বিজ্ঞান না ধর্ম?

অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন


গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবিশ্বাসীগণ যাদেরকে আমরা নাস্তিক হিসেবে জানি তারা করোনা থেকে যদি বেঁচে যায় তাদেরকে বিজ্ঞান বাঁচিয়েছে মসজিদ-মন্দির নয় বলে যুক্তি উপস্থাপন করেছে। আর‌ এ নিয়ে শুরু হয়েছে যুক্তি পাল্টা যুক্তি। নাস্তিকরা দু’টি সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় উপাসনালয়কে টার্গেট করেছে, তারা কৌশলে চার্চ, প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়কে টার্গেট করেনি।


আসলে নাস্তিকরা ধর্মের বিপরীতে বিজ্ঞানকে কেন দাড় করাচ্ছে, কারণ নাস্তিকদের কোন মূল ভিত্তি নেই, তারা বিজ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই তারা কোনোভাবে তাদের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য বিজ্ঞানের আশ্রয় নেয়। তারা এটা জানে না যে বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সম্পর্ক মৌলিক। তারা এটাও জানে না যে পৃথিবীর বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা নাস্তিক নয়, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস রয়েছে, তবে তাদের মধ্যে অনেকেই আবার নাস্তিক রয়েছেন। নাস্তিক হওয়া না হওয়ার সাথে বিজ্ঞানের কোন সম্পর্ক নেই। তাই শুধু নাস্তিকরা বিজ্ঞানমনস্ক আর ধর্মীয় বিশ্বাসীরা বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে এটা মোটেও বলা যাবে না।
নাস্তিকরা নিজেদেরকে খুবই আধুনিক মনে করে কিন্তু পক্ষান্তরে তাদের এই বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর আঘাত করে তারা যে কী পরিমান পশ্চাৎপদ সেকেলে প্রতিহিংসাপরায়ণ তার প্রমাণ দেখিয়েছে। তারা এটাও ভুলে গিয়েছে যে মেডিকেল সায়েন্সে মুসলিম, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মালম্বীদের অবদানের কথা।


করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে আর যে বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন তৈরি করছেন তাদেরও সুনির্দিষ্ট হয়তো ধর্মবিশ্বাস রয়েছে আর কারো ধর্মীয় বিশ্বাস নাও থাকতে পারে। এই ভ্যাকসিন তৈরির জন্য নাস্তিক হতে হয় না। হতে হয় মানবিক মানুষ। কোনো ধর্ম বিজ্ঞান, গবেষণা, জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান অনুসন্ধানকে অস্বীকার করেনি।
মানুষের যত বিশ্বাস আছে তার মধ্যে ধর্ম বিশ্বাস হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সেনসিটিভ।

নাস্তিকরা মানুষের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত করে এবং ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ দেখিয়ে সবচেয়ে ছোটলোকির পরিচয় দিয়েছে, কারণ তারাতো বর্ণচোরা, বিশেষ সুবিধার জন্য নিজেদেরকে নাস্তিক হিসেবে পরিচয় দেয় কিন্তু মৃত্যুর পরে তাদের জানাজা হয়, ধর্মমতে তাদের আবার কবর দেয়, তারা নিজেদের পরিচয় নিয়ে কবরে পর্যন্ত যেতে পারে না। আসলে তাদের কোন মৌলিকত্ব নেই, তাদের ধর্ম নেই, বিজ্ঞানের মালিকও তারা নয়। তারা ধর্মের বিপরীতে বিজ্ঞান কে দাঁড় করিয়ে কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে চলে।


আসলেই তারা মানবতা বুঝে না। তারা মনে করে যে সবকিছু অটোমেটিক্যালি হয়ে যায়। সৃষ্টিকে তারা অস্বীকার করে। তারা বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী। বানর থেকে তাদের আবির্ভাব। তারা আবার বানরের কাছে ফিরে যেতে চায়। সেজন্য তাদের মধ্যে মানবিকতা নেই। অন্যকে আঘাত করা না করা তাদের জন্য কোন ব্যাপার না। তারা নিজেদেরকে মানুষের পরিবর্তে, মানুষের বংশের পরিবর্তে তারা বানরের বংশধর এ পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।


এবার আসুন, নাস্তিকদের বিজ্ঞানের কথা বলি, বিজ্ঞানের ক্ষমতা যদি এতো বেশি থাকে তাহলে বিজ্ঞান কী অনুমান করতে পেরেছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে এমন এক জীবাণু পৃথিবীতে আসবে, দুই তিন মাসের মধ্যে পুরো পৃথিবী স্থিমিত করে দিবে। বিজ্ঞানের যত আবিষ্কার আছে তা দিয়ে এই ভাইরাস নির্মূল করা যাবে না, নতুন কিছু লাগবে।

মানুষের জ্ঞান, যোগাযোগ, উন্নয়ন সবগুলোকে স্তিমিত করে দিবে। সবচেয়ে ক্ষমতাশালীকে করে দিবে অসহায়। আর যদি অনুমানও করে এ জন্য বিজ্ঞানের কী প্রস্তুতি ছিল? নাস্তিকদের খোড়া যুক্তি যদি আমরা মেনেও নি যে বিজ্ঞান করোনা থেকে তাদেরকে বাঁচিয়েছে মসজিদ মন্দির নয়, তাহলে করোনার ফলে লক্ষাধিক লোকের যে মৃত্যু হল তাদের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান কী করেছে? নাস্তিকরা কী বলবেন বেঁচে গেলে বিজ্ঞান আর মরে গেলে আমরা জানি না!


আসলে এই ধরনের নাস্তিকদেরকে নিয়ে আমার তেমন বেশি মাথাব্যথা নেই। কারণ তাদের থেকে ভালো কিছু কখনো আশা করা যায় না। আমি যদি ধর্মীয় দিক থেকে বিষয়টি বিবেচনা করি পবিত্র কুরআনে এ ধরনের নাস্তিকদের কথা বারবার বলা হয়েছে, এদের অস্তিত্ব আছে, এদের অস্তিত্ব দিনদিন বৃদ্ধি পাবে, এদের খোঁড়া যুক্তিও আরো বাড়বে, তাদের দল আরো বড় হবে, পৃথিবীকে তারা এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাবে তখন কেয়ামত সংঘটিত হবে। নাস্তিকদের সাথে সাথে ধর্মীয় মূর্খতা ও গোঁড়ামি বাড়বে। কেয়ামত হচ্ছে নাস্তিক ও ধর্মীয় গোঁড়ামির ফল।


আসুন, আমরা আমাদের বিশ্বাসের জায়গাটাকে আরও মজবুত করি, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, তিনি তো বলেছেন, তিনি আমাদের রোগ দিবেন এবং তার থেকে আরোগ্য করবেন। কিন্তু তিনি রোগের ঔষধ আসমান থেকে নাযিল করবেন না। কোন না কোন মানুষের মাথা থেকে সে ওষুধ আসবে, মানুষের মধ্যে সেই জ্ঞান তিনিই দিবেন। আর সেটি হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার ক্যারিশমা। আসলেই আমরা যদি মানুষ (human being) হই তাহলে আমাদের সাথে সৃষ্টিকর্তার সম্পর্ক থাকবে, আর যারা human being নয়, যারা বানরের বংশধর তাদের সাথে কখনো সৃষ্টিকর্তা ও ধর্মের সম্পর্ক থাকবে না। তাদের সাথে সম্পর্ক থাকবে পশুর । আসুন আমরা মানবতা, মানুষ ও বানরের মধ্যে পার্থক্য বুঝি, তাহলে নাস্তিকদের যুক্তি বুঝতে আমাদের অসুবিধা হবে না।


লেখক: শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এসএস/ এমএইচ/ বাংলাবার্তা