উপমহাদেশের কেউ পারেনি, বাংলাদেশ কি পারবে রেকর্ড গড়তে?

ভারতের গুজরাট রাজ্যের রাজকোটে আজ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। তিন ম্যাচের সিরিজটিতে ১-০ তে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

ভারত এখন পর্যন্ত নিজেদের মাঠে মাত্র চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে।

ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলো ভারতকে তাদের মাটিতে হারিয়েছে। কিন্তু উপমহাদেশের কোনো দল এখনো পর্যন্ত ভারতকে তাদের মাঠে হারাতে পারেনি। তাই আজ বাংলাদেশের সামনে সেই সুযোগ এসেছে।

একটা সময় ছিল ভারতের মাটিতে ভারতকে হারানো বাংলাদেশের জন্য অসাধ্য সাধনের মতোই ব্যাপার। কিন্তু প্রথম ম্যাচে জয়ের পর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য কাজটা এখন আর অতটা কঠিন বলে মনে হচ্ছে না।

মাঠে ও মাঠের বাইরের নানা ঘটনায় কোনঠাসা বাংলাদেশ দল টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটি জিতে বেশ নাটকীয়ভাবে দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে।

নবীন খেলোয়াড়রা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছেন।

নাইম শেখ, আফিফ হোসেন ধ্রুব ও আমিনুল বিপ্লব- এই তিনজন ক্রিকেটার নিজেদের দক্ষতা ও শারীরিক ভাষা দিয়ে দলের চিত্র অনেকটা বদলে দিয়েছেন।

নাইম শেখ প্রথমবার বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেই ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন, তিনি প্রথম ম্যাচে শুরু থেকে ব্যাট হাতে ভারতীয় বোলারদের সহজে উইকেট পেতে দেননি।

আফিফ হোসেন ধ্রুব, ৩ ওভার বল করে ১১ রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়েছেন, টি-টোয়েন্টির বিচারে বেশ কিপটে বোলিং করেছেন তিনি।

মাঠে নামার আগে সাকিব ও তামিমের অনুপস্থিতি নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হলেও, প্রথম ম্যাচে জয়ের পর তারুণ্য ও মুশফিক-রিয়াদের অভিজ্ঞতার মিশেলে বেশ নির্ভার একটা দল মাঠে লক্ষ্য করা গেছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বহু দিন যাবৎ একজন লেগস্পিনারের খোঁজে ছিল, সেটার অভাব মিটছে বিপ্লবের হাত ধরে।

বাংলাদেশ মূলত সিনিয়র নির্ভর ক্রিকেট থেকে খানিকটা হলেও সরে আসছে এখন।

বাংলাদেশ দলের যে পাঁচ ক্রিকেটারকে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ বলে বর্ণনা করা হয়, তাদের মধ্যে তিনজন ক্রিকেটারই এখন দৃশ্যপটে নেই।

তাই এ একটি জয় সেই নির্ভরতা থেকেও বের করে আনছে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলকে।

তবে লিটন দাসের ব্যাটে রান না আসা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ নেল ম্যাকেঞ্জির জন্য।

ভারত নিশ্চিতভাবেই আরো বেশি প্রত্যয় ও আগ্রাসী হয়ে মাঠে নামবে।

দুই অধিনায়ক কী বলছেন

রোহিত শর্মা আগের ম্যাচের সব ভুলে যাওয়ার কথাই দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন।

তিনি বলেন, “আমাদের মনে হয় না শেষ ম্যাচে কী হয়েছিল সেটা আর ভাবার সময় আছে। আমাদের এমন কোনো পরিবর্তনও করা প্রয়োজন নেই।”

ভারতের ভারপ্রাপ্ত টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বলেন, “আমাদের ভালো খেলতে হবে, এখানে কেউ বোলার হিসেবে হারেনি এখানে আমরা দল হিসেবে হেরেছি। আমাদের ব্যাটসম্যানদের নিজেদের কাজ করতে হবে, বোলারদেরও একইভাবে কাজ করতে হবে।”

“যে ভুলগুলো করেছি সেসবে নজর দিতে হবে, ভুল দ্বিতীয়বার না করাই ভালো দলের লক্ষণ।”

রাজকোটের উইকেট নিয়েও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ভারতের রোহিত শর্মা।

তার মতে, ব্যাটিং ও বোলিং উভয় পক্ষ সুবিধা পাবে রাজকোটে।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোনো ম্যাচেই আগে থেকে বলা যায়না কখন কী হবে।

বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বলেন, “টি-টোয়েন্টিতে উইকেট পর্যালোচনা করে খেলা গুরুত্বপূর্ণ, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত মানিয়ে নেয়ার ব্যাপারটা প্রয়োজন।”

তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর মাঝে এই সিরিজটির আলাদা তাৎপর্য আছে বলেই মনে করেন তিনি।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মনে করেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটে যা হয়েছে ও হচ্ছে, তাতে এই জয়টা আলাদা আত্মবিশ্বাস যোগাবে। “আগের ম্যাচ নিয়ে বসে নেই আমরা, এখন পরের ম্যাচ নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি আমরা।”

“আমাদের মানসিকতা ঠিক থাকতে হবে, তরুণ তিনজন ভালো করছে। তাদের সামর্থ্য আছে আরো ভালো করার। মানসিক বাধা অনেকটাই পেরিয়ে আসছি, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অনেক বড় বড় মুহূর্ত আসবে, আমরা কতটা নির্ভার থেকে খেলতে পারি সেটাই এখন দেখার বিষয়।”