Friday, July 11, 2025
Homeশিক্ষাক্যাম্পাসইবি উপাচার্যের 'পিএস' মুক্তিযোদ্ধা সনদ ছাড়াই ১০ বছর চাকুরী!

ইবি উপাচার্যের ‘পিএস’ মুক্তিযোদ্ধা সনদ ছাড়াই ১০ বছর চাকুরী!

ইবি প্রতিনিধিঃ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সনদ ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকুরী নিয়েছিলেন উপাচার্যের ‘পিএস’ রেজাউল করিম (রেজা)। ১০ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এ সনদ ছাড়াই চাকুরী চালিয়ে যাচ্ছেন

এদিকে, এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। এ নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড় । কিন্তু মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না কেউ-ই।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা প্রশ্ন তুলছে তিনি ভিসির পিএস দেখে পার পেয়ে যাবেন। যেখানে ভিসি প্রফেসর রাসিদ আসকারী এক পয়সার দূর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না সেখানে রেজা কীভাবে বহাল তবিয়তে আছেন। প্রশ্ন উঠেছে রেজার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়োগ বিধি ও শর্ত শিথিল করেছে কি না?

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তভঙ্গ করে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সনদ ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকুরী করছেন ১০ বছর যাবত বর্তমান ভিসির পিএস রেজাউল করিম (রেজা)। তিনি ভাইস-চ্যান্সেলর অফিসের উপ-পরিচালক (পিএস টু ভিসি)। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রালয়ের সনদ প্রদর্শন ও জমা না দিলেও তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সনদ দিয়েই প্রায় ১০ বছর চাকুরী করতেছেন। এত বছরেও ইবি প্রশাসনের বিষয়টি নজরে না আসা হতাশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। এমনকি প্রশাসন বিষয়টি যাচাই করার মত পদক্ষেপও নেয়নি।

সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২১ অক্টোবর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। উক্ত বিজ্ঞপ্তির নির্দেশিকায় মুক্তিযোদ্ধা/মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটায় আবেদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র/ সাময়িক/মূল সনদপত্রের সত্যায়িত কপি আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে এবং নিয়োগ বাছাই বোর্ডে উপস্থিত হওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত সাময়িক/মূলসনদপত্র আনতে বলা হয়। সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মোঃ রেজাউল করিম, পিতা-মরহুম আব্দুস ছোবহান, গ্রাম- মুকুন্দগাতী, ডাকঘর-শেরনগর, উপজেলা-বেলকুচি, জেলা-সিরাজগঞ্জ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে বেশ কয়েকটি অফিসে আবেদন করেন। তিনি তার আবেদনের সাথে মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত সনদের পরিবর্তে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক প্রদত্ত সনদের সত্যায়িত কপি জমা দেন।

নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে তিনি ২০১০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি ভাইস-চ্যান্সেলর অফিসের উপ-পরিচালক (পিএস টু ভিসি) হিসেবে কর্মরত আছেন। এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী চাকুরী প্রাপ্ত অন্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সনদ জমা দিলেও মোঃ রেজাউল করিম (রেজা) কি ভাবে মন্ত্রণালয়ের সনদ ছাড়াই দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর চাকুরী করছেন এমন প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা এ বিষয়ে অতিদ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ইবির একজন কর্মকর্তা বলেন,‘ আমরা সকলেই মুক্তিযোদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সনদ ও গেজেট দিয়ে চাকুরি করছি। একই বিধিতে আইন সবার জন্য সমান। কেউ অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। যদি করে তা অবৈধ ও বেআইনী।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার হাজী রফিকুল আলম টুকু বলেন, বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা/মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সনদ চাওয়া হয়। সেখানে মন্ত্রণালয়ের সনদ ব্যতিত মুক্তিযোদ্ধা/ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকুরী বৈধ্য হতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরির ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের সনদের কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি গেজেট ও লাল মুক্তিবার্তায় নাম থাকতে হবে। চাকুরির ক্ষেত্রে কমান্ড কাউন্সিলের সনদের কোন মূল্য নেই। যদি কেউ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সনদ বাদে চাকুরি করে এমন বিষয় সামনে আসলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয় মন্ত্রণালয়ের সনদ সম্পর্কে জানতে চাইলে মোঃ রেজাউল করিম (রেজা) বলেন, আমার পিতা একজন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি মুক্তিযোদ্ধা বিষয় মন্ত্রণালয়ে সাময়িক সনদ প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেছি কিন্তু এখনো পাইনি। তবে নিয়োগ বিধিতে প্রধান শর্ত হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের সনদের বিষয়টি উল্লেখ আছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আব্দুল লতিফ বলেন, মোঃ রেজাউল করিম চাকুরীতে যোগদান করেছেন ২০১০ সালে। তখন আমি রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে ছিলাম না। তবে তার ব্যক্তিগত ফাইল দেখেছি। সেখানে তার পিতার বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত সনদ আছে। বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত কোন সনদ নেই।
এদিকে তথ্য অধিকার/তথ্য প্রাপ্তি সংক্রান্ত বিধিমালা ২০০৯ এর ৮ ধারা অনুযায়ী তথ্য প্রাপ্তির আবেদন “ক” ফরমে একটি মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর ইবি রেজিস্ট্রারের নিকট মোঃ রেজাউল করিম এর পিতা মরহুম আব্দুস ছোবহান একজন মুক্তিযোদ্ধা তার প্রমাণ স্বরূপ (১) সামরিক/বেসামরিক গেজেট নম্বর (২) ভারতীয় তালিকা/লাল মুক্তিবার্তা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নম্বর (৩) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত সাময়িক সনদ নম্বর (৪) মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা উত্তোলন বহি নম্বর চাওয়া হয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রার (ভারঃ) এস এম আব্দুল লতিফ স্বাক্ষরিত যে সকল কাগজপত্র প্রেরণ করা হয় তাতে চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র প্রদান করতে ব্যার্থ হন কর্তৃপক্ষ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments