‘আল্লাহ ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না’ ইতালির যে ইতিহাস জানতে হবে

আহমেদ আফগানী

আজ ইতালির এমন পরিস্থিতিতে আমরা সবাই কাঁদছি, দোয়া করছি। এটা খুবই ভালো কথা। কারণ ইসলাম আমাদেরকে মানবিকতাই শিক্ষা দেয়। কিন্তু নিজেদের ত্যাগ-কোরবানী এবং স্বকীয়তার ইতিহহাস ভুলে গেলে চলবে না। আপনাদের তাহলে মনে করিয়ে দেই: মনে আছে ছবির এই মানুষটার কথা? মনে রাখবেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়া’লা মানুষকে ছাড় দেন কিন্তু একেবারে ছেড়ে দেন না!


‘লিবিয়ার শহীদ ওমর আল মুখতার- যাকে বলা হতো মরুর সিংহ। এখন থেকে ৮৭ বছর আগে ১৯৩১ সালে তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল তৎকালীন ইতালীয় শাসকেরা।
১৯১১ সালের অক্টোবর মাসে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সঙ্গে ইতালির যুদ্ধ হয়। সে সময় ইতালির নৌবাহিনী হানা দেয় লিবিয়ার উপকূলে। তখন লিবিয়া ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের অংশ। ইতালীয়রা লিবিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু তুর্কি সেনারা ও তাদের লিবিয় সহযোগীরা আত্মসমর্পণের পরিবর্তে উপকূল ছেড়ে পেছনের দিকে সরে আসেন।
ইতালীয় হানাদার বাহিনী তিন দিন ধরে ত্রিপলি ও বেনগাজিতে বোমা বর্ষণ করে। এরপর লিবিয়া দখলে নিয়ে নেয়।


লিবিয়ার সাইরেনাইকা অঞ্চলের জনগণ ওমর মুখতারের নেতৃত্বে একের পর এক প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। মরুভূমির লড়াইয়ে অভিজ্ঞ ওমর মুখতার হয়ে ওঠেন ইতালীয় সেনাদের জন্য চক্ষুশূল। অবশেষে ২০ বছর পর ১৯৩১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এক অতর্কিত হামলায় আহত ও বন্দি হন মুখতার। ৫ দিন পর আতঙ্কগ্রস্ত ইতালিয় দখলদাররা তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করে।


ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে জানা যায় মরুর সিংহ নামে খ্যাত ওমর মুখতারকে মুসোলিনির ইটালিয়ান সেনা অফিসার জিজ্ঞেস করেছিল: তুমি কি জানো তোমার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড? জবাবে ওমর মুখতার বলেছিলেন, হ্যাঁ। ওই অফিসার বললেন, তুমি যা করেছ তার জন্য তুমি কী অনুতপ্ত? ওমর মুখতার বললেন, প্রশ্নই ওঠে না, আমি আমার ধর্ম, দেশ আর মানুষের জন্য লড়েছি।


সেনা আদালতের বিচারক তার দিকে তাকিয়ে বলেন, তোমার মত লোকের এমন পরিণতি দেখে আমি দুঃখিত ।ওমর মুখতার বললেন, “কিন্তু এটাই তো জীবন শেষ করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়। মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ তিনি আমাকে এভাবে বীরের মত শহীদ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।”


এরপর বিচারক প্রস্তাব দিলো তাকে মুক্ত করে দেয়া হবে, যদি তিনি মুজাহিদদের কাছে চিঠি লেখেন যাতে মুজাহিদরা ইটালিয়ানদের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে ।
ওমর মুখতার বিচারকের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন: “যেই শাহাদত অঙ্গুলি দিয়ে আমি প্রতিদিন সাক্ষ্য দেই যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। সেই আঙ্গুল দিয়ে অসত্য কোনো কথা লিখতে পারবো না। আমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আত্মসমর্পণ করি না। আমরা হয় জিতি, না হয় মরি।”


সূত্র: মো. ইয়াসিনের টাইমলাইন থেকে।


এমএইচ/বাংলাবার্তা