নিউজ ডেস্ক
করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় আমাদের সবকিছু কত সংকীর্ণ হয়ে গেছে সেটা বোঝার জন্য এমন একটা সত্য ঘটনাই হতে পারে সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ঘটনাটি হুবহু তুলে ধরা হলো। সামাজিক বিবেচনায় আমরা ভুক্তভোগীর নাম ও পরিচয় প্রকাশ করছি না।
‘আমার মাকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছি। এক ডাক্তারের পর অন্য ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হচ্ছি। কিন্তু কোথাও ঠাঁই হলো না আমার অসুস্থ মায়ের।
গত শনিবার (১৪ মার্চ) রাত থেকে পিঠে ব্যাথার সাথে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় মায়ের। এরপর ধীরে ধীরে খুব কাশি বাড়ে সাথে জ্বরও চলে আসে। এভাবে দুইদিন বাসায় চিকিৎসার পর মায়ের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় মাকে স্কয়ার হসপিটালে নিয়ে যাই। (যেহেতু মায়ের অ্যানজিওপ্লাস্টি এই হসপিটালেই করা হয়)।
হসপিটালে নেওয়ার পর ডাক্তাররা রোগীর হিস্ট্রি শুনে বললেন এখন তো করোনা ভাইরাসের কারনে সরকার বলে দিয়েছে সব হাসপাতাল থেকে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের রোগীদেরকে যেন করোনার চিকিৎসা হয় ঐ চার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে এরপর সবকিছু ইনভেস্টিগেশন করতে। অন্যথায় উনারা কিছু ব্লাড টেস্ট আর চেস্ট এক্সরে করে দেখবে তারপর রিপোর্ট নিয়ে বাসায় চলে যেতে।
ডাক্তাররা এইধরনের রোগী রাখতে পারবে না।
উপায়ন্তর না পেয়ে আমরা স্কয়ার হসপিটাল থেকে যেগুলো সম্ভব ঐ টেস্ট গুলো করাই। তারপর ডাক্তাররা বললো রোগীর তো RTI (নিউমোনিয়া) ধারণা করছি। আপনারা রোগীকে কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটালে নিয়ে যান। আমরা বললাম মাকে মেডিসিন দিতে। কিন্তু ডক্টর বললো যা করার কুর্মিটোলা হসপিটালে করবে। আগে রোগীর COVID-19 পরীক্ষা করতে হবে।
শেষ পর্যন্ত ভোর ৪ টায় মাকে নিয়ে বাসায় চলে আসতে হয়। এরপর সকালে IEDCR এর সবগুলো হটলাইনে কল দিতে থাকি। যাতে করে তারা বাসায় এসে রোগীর স্যাম্পল নিয়ে যেতে পারে। অথচ তারা আমাদের কোন কল রিসিভ করেনি। কম করে হলেও প্রতিটি নাম্বারে ১০-১৫ বার কল দিয়েছিলাম। এরপর আমরা কুর্মিটোলা হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। সেখানকার একজন ডাক্তারে সাথে কথা বলে জানতে পারি- কুর্মিটোলাতে এনে কোনো লাভ নেই।
অর্থাৎ সরাসরি IEDCR এ নিয়ে স্যাম্পল দিয়ে আসতে হবে রোগীর। এরপর আমরা IEDCR এ নিয়ে যাই। যাবার পর সেখানকার কর্মরতরা বললো ‘আপনারা এখানে কেনো আসলেন? বারবার সবাইকে এখানে আসতে নিষেধ করেছি। হট লাইনে কল দিলে আমরা গিয়ো স্যাম্পল নিয়ে আসতাম।’
এরপর আমরা যখন বললাম হটলাইনে বারবার কল দিয়েও আপনাদেরকে পাইনি। পরে তারা বললো রোগীর পরিবারের কেউ যদি সম্প্রতি বিদেশ থেকে আসে বা রোগী যদি একমাসের মধ্যে করোনা আক্রান্ত দেশে যান তাহলেই তারা স্যাম্পল নিবেন, না হয় সাধারণ কোনো হাসপাতালে নিতে।
এরপর আমরা যখন দেখালাম-যে আমাদেরকে স্কয়ার থেকে বের করে দিয়েছে। তখন তাদের উত্তর ছিলো ‘সেটা আমরা জানিনা’। কাজেই তারা রোগীর স্যাম্পল নিবেন না।
ও হ্যাঁ, অলরেডি তাদের কাছে দেড় লক্ষ স্যাম্পল জমা আছে। কিন্তু তাদের কাছে পর্যাপ্ত কিট না থাকায় তাদের পক্ষে সবারটা দেখা সম্ভব না।
মাকে আমি কোন হসপিটালে নিবো? কেউ তো চিকিৎসা দিচ্ছে না। উপায় না পেয়ে আপাতত বাসায় চিকিৎসা দিচ্ছি। আমার হাজবেন্ড ডাক্তার হওয়ায় উনার পরামর্শ যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা দিচ্ছি। কিন্তু মায়ের শরীরের অবস্থা যদি আরও খারাপ হয় তখন আমার মাকে কোথায় নিবো জানিনা।
ভুক্তভোগীর টাইমলাইন থেকে নেওয়া।
এমএইচ/বাংলাবার্তা