সেপ্টেম্বরে হটাৎ শরীরে জ্বর আসে শরীরে। জ্বরের ওষুধও খাই কিন্তু কমে না। তখন ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকায় ডেঙ্গু টেস্ট করাই। পরীক্ষায় ডেঙ্গুও পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে শরীর হলুদ বর্ণ হয়ে যায়। ইউরিনও হলুদ দেখা যায়। ডাক্তার (দীর্ঘদিন তিনি পরিবারের সবার চিকিৎসা করান) বুঝতে পারেন জণ্ডিস। তখন ডাক্তার পুরো দুই সপ্তাহের বেড রেস্ট দেন আমাকে। দুই দিন পর আমার শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হয়। খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং অনবরত বমি হতে থাকে। আবার যাই ডাক্তারের কাছে। তিনি দেখলেন-খুব খারাপ অবস্থা আমার। সমস্যা বুঝতে পেরে তিনি আমাকে লিভার বিশেষজ্ঞ দেখাতে বললেন সেদিনই। একজন সিনিয়র সহকর্মীর সহায়তায় সেদিন রাতে লিভার বিশেষজ্ঞ (ভালো চিকিৎসক) একজনকে দেখালাম। তিনি আমাকে দেখে আর বাসায় যেতে দেননি। সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি দেন। চিকিৎসা চলে। টানা ১২ দিন হাসপাতালে সেলাইন চলে। ওষুধ চলে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ডাক্তার একটি এন্টি ভাইরাল (আমার রোগের একমাত্র ওষুধ যা পরে জানতে পারি) দেন। বলে দেন সেটি যাতে বন্ধ না হয়।
এর মধ্যে হাসপাতালে চট্টগ্রামের একজন নামকরা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অনকলে রোগী দেখতে আসেন। সুযোগ পেয়ে আমিও তাকে দেখাই। কেবিনে এসে দেখে যান তিনি। আমাকে ও পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে তিনি বললেন- জণ্ডিস রোগীকে এন্টি ভাইরাল কেন দিয়েছে। তিনি ওষুধের তালিকা থেকে এন্টি ভাইরাল বাদ দিয়ে অন্য ওষুধ কন্টিনিউ করার পরামর্শ দিয়ে চলে যান। তার পরামর্শে ওষুধ বন্ধ রাখা হয় তিনদিন। তিনদিন পর লিভার বিশেষজ্ঞ আমি যার পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম তাকে অনকলে এনে দেখাই। আমাকে দেখার পর এন্টি ভাইরাল বন্ধ দেখে খুব রাগ করলেন তিনি। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ উনার চেয়েও সিনিয়র তাই তিনি কিছু বললেনও না। শুধু এন্টি ভাইরাল আবার শুরু করার জন্য বলে চলে গেলেন।
প্রায় দুই মাস নিয়মিত এন্টি ভাইরাল খেলাম। চিকিৎসা চললো। কিছুটা সুস্থ হলে এই মাসে ইন্ডিয়া গেলাম চেকআপ করাতে। সেখানে একজন লিভার বিশেষজ্ঞ দেখালাম। তিনিও একই এন্টি ভাইরাল দিলেন। পরামর্শ দিলেন। লিভারে কিছু সমস্যা নিয়ে আলাপ করলেন। ওষুধ দিলেন। তার কাছে জারতে পারি- আমার রোগের একমাত্র ওষুধ ওই এন্টি ভাইরালটি যেটি আমাকে দেওয়া হয়েছিল। ডাক্তার আমাকে অন্তত একবছর সেই এন্টি ভাইরাল খাওয়ার পরামর্শ দিলেন। বললেন নিয়ম মেনে ওষুধ খেলে পুরো সুস্থ হতে আমার এক থেকে দেড় বছরের মতো সময় লাগবে, আরও বেশিও লাগতে পারে।
বাংলাদেশে এসে আরেকজন লিভার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে আলাপ করলাম। তিনিও অভয় দিয়ে শুধু নিয়ম মেনে এন্টি ভাইরাল খেতে বললেন এক বছর।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ওই ডাক্তার যিনি আমাকে এন্টি ভাইরাল বন্ধের পরামর্শ দিয়েছিলেন, যার পরামর্শে তিনদিন বন্ধ রেখেছিলাম তার সিরিয়াল পাওয়া যায় না। তিনি এতো বেশি ‘জনপ্রিয়’ যে তার সিরিয়াল পেতে দিনের পর দিন মানুষ অপেক্ষা করে। এমন সিনিয়র ডাক্তারের পরামর্শেই আমি জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছিলাম!!!
উপলব্ধি: আমাদের ডাক্তাররা অন্যদেশের ডাক্তারদের চেয়ে মেধাবী। কিন্তু একটি বিষয়ে তারা অন্যদেশের ডাক্তারদের থেকে পিছিয়ে। সেটি অভারকাম হলে একদিন আমাদের ডাক্তারদের চিকিৎসা নিতে অন্যদেশ থেকে রোগী আসা শুরু করবে।
সরওয়ার কামাল
স্টাফ রিপোর্টার বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর