মূর্ধন্য দীপু: বিশ্বের সর্ববৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলে চাকরি পেয়েছেন সিলেটের নাফিউল আদনান চৌধুরী। তিনি সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। গুগলের আয়ারল্যান্ড অফিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিনি কাজ করবেন।
নাফিউল বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে এক বছর পড়াশোনা করতে পারি নি, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। তারপর সিলেটের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসইতে ভর্তি হই। ভর্তির সময় একজন বলেন “ফিজিক্স ম্যাথে এ+ নাই, সিএসই কী পারবা তুমি?”
ভর্তির বছর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামিং কম্পিটিশন (সিএসই কার্নিভাল) প্রথমবারের মতো যাওয়ার সুযোগ হয়। কিছুটা মানসিক পরিবর্তন আসে তখন থেকে। তার আগে সবার মতই আমারও ধারণা হয়ে গেলো প্রাইভেটে পড়ছি, শুধু টাকাই ফেলছি, লাইফে যে কী করবো!
এরপর শুরু হয় প্রবলেম সলভিং, কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং কম্পিটিশন এর জীবন।
মোটামুটি ভালো প্রবলেম সল্ভিং স্কিল, এলগরিদম, ডাটা স্ট্রাকচারের নলেজ থাকার কারণে আল্লাহ্র রহমতে গ্রাজুয়েশন শেষের আগেই পেয়ে যাই প্রথম চাকুরী। গুগলে চাকুরী নিয়ে তেমন জানাশোনা ছিলো না নাফিউলের। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর শিক্ষকের এর বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারেন। বললেন,
গুগলে অথবা অন্য বিগ টেক জায়ান্টে চাকুরির ইচ্ছা থাকলেও আআত্মবিশ্বাসের অভাবে ঠিকঠাক আবেদন করা হয় নি । তবে এক ছোটবোন থেকে Cracking The Coding Interview বই নিয়ে এসে পড়াশোনা করেছি অনেক । ঠিকঠাক গুগল চাকুরির প্রস্তুতি নেয়া শুরু করি ২০২১ এর সেপ্টেম্বরে । তার আগে সব বেসিক টপিক ঝালাই দিয়ে ফেলি, যেহেতু কম্পিটিটিভ ব্যাকগ্রাউন্ডের ছিলাম, সেহেতু বেশী কষ্ট করতে হয় নি । পরিচিত যারা বড় জায়গায় জব করছেন, তাঁরা অনেক পরামর্শ এবং সহায়তা করেছেন।
গগতবছর ডিসেম্বরের ৬ তারিখ গুগলে প্রথম রাউন্ড পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ফাইনাল রাউন্ড শুরু নয় জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ থেকে। মাঝখানে চলে গেলো দশদিন। এরমধ্যে দুদিনে সব মিলিয়ে ৫ বার ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি গুগল অফিস থেকে জানালো হলো চাকুরী হয়েছে। গুগলের রিক্রুটার কল দিয়ে বললো “You totally Smashed the Interviews! We are offering you the job now, are you willing to join Google, Dublin?”
নাফিউল বলেন, এই সংবাদ পেয়ে আব্বু আম্মু কান্নাকাটি শুরু করেন। আমার ভাই, বোন, বউ আব্বু, আম্মু, আমার জন্য কী যে স্যাক্রিফাইস করে করে এসেছেন এতটা দিন ধরে বলার মতো না। আমার মনে হলো এই মানুষদের এই খুশির জন্যই এই প্রাপ্তিটা আমার দরকার ছিলো।
তিনি আরও বলেন, আত্মীয় স্বজন, কাছের বন্ধুবান্ধব, জুনিয়র, সিনিয়র, টিচারস এবং বিভিন্ন সময়ে যেকোন উপায়ে যারা আমাকে সহায়তা উৎসাহ দিয়েছেন। আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন, সবার নিকট কৃতজ্ঞ। আমার এতদুর আসার পেছনে অবদান রাখা মানুষের সংখ্যা অনেক অনেক বেশী। সবচেয়ে প্রশান্তির ব্যাপার হচ্ছে আমার কাছের অনেকেই আছেন যারা মনে করে এই প্রাপ্তিটা তাদেরও, আসলে সত্যিই তাই।
এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা