নীতিকথা, প্রতিপক্ষকে হুমকি, মানবতার কথা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, ভূগোল কিংবা পৌরনীতি- এমন কোনো বিষয় নেই যে বিষয়ে বিজ্ঞ নন শাহেদ করিম। সকল বিষয়ে জাতিকে জ্ঞান দিতে নিজেই টাকা খরচ করে প্রায় সময় আসতেন টিভির টকশোতে। যদিও তার শিক্ষাগত যোগ্যতা- এসএসসি পর্যন্ত। কিন্তু ইতিহাস ঘাটলে মনে হবে তিনি প্রতারণায় পিএইচডি করেছেন।
দেশের প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে শাহেদ করিমের রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা হওয়ায় তিনি এবং রিজেন্ট হাসপাতাল ছিলো আলোচনায় তুঙ্গে। কিন্তু রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় র্যাবের অভিযানের পর দেশবাসী জানতে পারে তিনি ভয়ঙ্কর প্রতারক। প্রতারণা করে মানুষ ঠকানোই তার পেশা।
তিনি ক্ষমতাসীন দলের রথী-মহারথি এবং প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে ৬ বছর আগে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার সরকারি অনুমোদন নিয়েছেন। করোনা চিকিৎসার নামে ভয়াবহ প্রতারণা মাধ্যমে তিনি কিভাবে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন; কিভাবে সরকারের কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা বিল নিয়েছেন তা প্রকাশ করেছে র্যাব।
এদিকে শাহেদ করিমের এক প্রতারণা ফাঁস হওয়ার পর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে নানান প্রতারণা।
আসুন জেনে নেয়া যাক…
কখনো শাহেদ, কখনো কর্ণেল ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী, আবার কখনো মেজর শাহেদ করিম সেজে দীর্ঘ অনেক বছর ধরে প্রতারণা করে বর্তমানে শত কোটি টাকার মালিক নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা শাহেদ করিম।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। নিজেকে কর্ণেল (অব.) পরিচয় দিয়ে ব্যাংক থেকেও নিয়েছেন লোন। কখনো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও কর্তা ব্যক্তিদের কাছের লোক পরিচয় দিয়ে, আবার কখনো সরাসরি মন্ত্রীর নাম ব্যবহার করেই মানুষকে হুমকি দেয়া, ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর এডিসি পরিচয় দেয়া, অবৈধ লাইসেন্সহীন একটি হাসপাতাল গড়ে তোলা এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগী এনে আটকে রেখে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও রাজধানীতে তার রয়েছে আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটি নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। যদিও এর একটিরও কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটির ১২টি শাখা করে হাজারো সদস্যের কাছ থেকে আত্মসাৎ করেছেন কোটি কোটি টাকা। এর আগেও শাহেদ করিম উত্তরার ৪,৭ ও ১৩ নম্বর সেক্টরে ভুয়া শিপিংয়ের ব্যবসা করেছেন। সেখানেও সাধারন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা ।
এনিয়ে সারাদেশে তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় ২টি , বরিশালে ১ , বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরির নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার কারনে উত্তরা থানায় ৮টি সহ ৩২টিরও অধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে তার প্রতারণা কর্মকান্ড নিয়ে প্রতিবেদন হলেও তার কাজে বিঘ্নতা ঘটাতে পারেনি কেউ।
যদিও তার বিরুদ্ধে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র বানানোর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কাগজ পত্রবিহীন একাধিক গাড়ির মালিক তিনি। যেসব গাড়ীতে ভিআইপি ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড, অবৈধ ওয়ারল্যাস সেট আর অস্ত্রসহ ৩ জন বডিগার্ড থাকে সর্বদা।
এমনকি নিজের অফিসের ভেতরে একটি টর্চার সেলও রেখেছেন তিনি। জানা যায়, কোনো পাওনাদার টাকা চাইতে আসলে পাওনাদারদের সেখানে টর্চার করা হয়। এছাড়াও অফিসে থাকে সুন্দরী রমণীরা। এর উদ্দেশ্যটা না হয় আর না-ই বললাম।