মা-মেয়েকে নির্যাতন করা সেই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

167
বাঁয়ে নির্যাতিতা মা মেয়ে।ডানে অভিযুক্ত মিরান
বাঁয়ে নির্যাতিতা মা মেয়ে।ডানে অভিযুক্ত মিরান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চুরির অপবাদে মা-মেয়েকে রশিতে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় আলোচিত হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিরানুল ইসলাম মিরানের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মা-মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় চকরিয়া থানায় মামলা রুজু হবার পর বেরিয়ে আসছে হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানের নানা অপকর্ম।

জানা গেছে, একসময় মিরান ছিলেন রিকশার মেকানিক । পরে সভাপতি নির্বাচিত হন হারবাং রিকশা সমিতির। ২০১৬ সালে বিশেষ মহলের অনুকম্পায় রাতারাতি বনে যান ইউনিয়ন
আওয়ামী লীগের সভাপতি। এরপর নৌকার টিকেটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারে বসেই শুরু হয় ক্ষমতার অপব্যবহার। চার বছরের ব্যবধানে প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান মিরান এখন বিপুল সম্পদের
মালিক বনে গেছেন।

হারবাং স্টেশনের পূর্ব পাশে বনবিভাগের রিজার্ভ জায়গায় তার আছে ৮টি বিল্ডিং বাড়ি। এসব বাড়ি ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ টাকা। অভিযোগ আছে, জনগণের নামে সরকারি
বরাদ্দ থেকে চারটি ডিপ টিউবওয়েল নিয়ে একটি নিজের বাড়িতে, আরেকটি নিজের মার্কেটে এবং বাকি দুইটি নিজের মৎস্যঘেরে বসিয়েছেন চেয়ারম্যান মিরান।

২০১৬ সালের জুন মাসে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর ইতিমধ্যে চারটি গাড়ির মালিক হয়েছেন চেয়ারম্যান মিরান। এসব গাড়ির মধ্যে আছে একটি নোহা মাইক্রো, একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস,
একটি পিকআপ ট্রাক ও একটি চাদের গাড়ি (জিপ)।

আর নামে-বেনামে বর্তমানে তিনি মোট ৩১ একর জায়গার মালিক বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় লোকজন।

তার বিরুদ্ধে পুরনো অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদ অথবা নিজ বাড়িতে সালিশবৈঠকে নামে বিভিন্ন সময় মানুষকে মারধর করার। হারবাং শাহ সুফি মাজারের খাদেম মো. ফয়েজ আহমদের ছেলে
মোহাম্মদ শাহজাহান শাহ বলেন, বিচারের নামে ২০১৮ সালের ৪ মে আমার বাবাকে বাড়িতে ডেকে চেয়ারম্যান মিরান নিজ হাতে লাঠি দিয়ে পেটান। এর পর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বেশ কয়েক দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানসহ দুজনকে আসামি করে কক্সবাজার আদালতে একটি হত্যা মামলা করা হয়। মামলাটি এখনও
বিচারাধীন রয়েছে।

এলাকাবাসীরা জানালেন, চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম দুই বছর আগে থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়ি থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স/ চৌকিদারি ট্যাক্স
বাবদ ৩/৪ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন। কিন্তু সরকারি বালামে দেখিয়েছে ৫০০ টাকা করে। ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি বরাদ্দ থেকে শতকরা ৩০ শতাংশ করে টাকা ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে
আত্মসাৎ করেছেন তিনি।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, হারবাং ইউনিয়নের পশ্চিম ভিলিজার পাড়া এলাকায় একটি কালর্ভাট নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের বরাদ্দ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান মিরান।
২০১৭-২০১৮ অর্থ বৎসরে উল্লেখিত পরিমাণ টাকা বরাদ্দ পেলেও ওই এলাকায় তিনি কোনো কালর্ভাট বসান নাই।

এছাড়াও বনবিভাগের রিজার্ভ সম্পত্তি নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

বনবিভাগের রিজার্ভ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ নিম্পত্তি নামে হারবাংয়ের পশ্চিম ভিলেজারপাড়ার ওবাইদুল হাকিমের
ছেলে বাদি মোজাফফর আহমদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার পর ফের একই এলাকার কালামিয়ার ছেলে বিবাদি আলী আহমদের কাছ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তার পক্ষে রায় দেন চেয়ারম্যান মিরান। একইভাবে তিনি ৩০ কানি জমির বিরোধ নিয়েও বিচার বাণিজ্য করেছেন।

ভিলিজার পাড়ার খুইল্যা মিয়ার ছেলে বাদি মোহাম্মদ হারুন অভিযোগ দায়ের করলেও স্থানীয় কালা মিয়ার ছেলে আলী আহমদ এবং অলি আহমদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বিচারটি খারিজ করে দিয়ে বিবাদীগণের পক্ষে রায় দিয়েছেন চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম।

এধরণের অসংখ্য অভিযোগ আছে ভুক্তভোগী জনগণের।

অনুসন্ধানে এরকম অনেক অভিযোগ বেরিয়ে আসে তার নামে । কিন্তু আওয়ামী লীগর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেন না।

এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হয়। কিন্তু তিনি আত্মগোপনে থাকায় তার মোবাইল
ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

 

এসএইচ/এফএম/বাংলাবার্তা =