মো. কাইছার হামিদ
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পটির কাজ দ্রুতগতিতে চলমান রয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে! তাঁদের পাশে যেন কেউ নেই।
স্বস্তির আশায় প্রহর গুনছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। দেশের চলমান বৃহৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে উপজেলার মাতারবাড়ী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অন্যতম। দ্বীপ উপজেলার আরেক বিচ্ছিন্ন ছোট দ্বীপটি মাতাবাড়ী-ধলঘাটা দু’টি ইউনিয়ন।
এই ইউনিয়নগুলোতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপান্তর করতে প্রত্যন্তাঞ্চলে গড়া তোলা হচ্ছে বড় বড় সরকারের মেগা প্রকল্প। ধারাবাহিক প্রকল্পগুলির কারণে হারিয়েছে এদেশের কেটে খাওয়া মানুষের চাষবাদের জমি। কেউ হারিয়েছে কর্মসংস্থান। আবার অনেকে ঘরভিটা হারিয়ে বাস্তহারা হয়ে পরবাসে জীবন যাপন করতেছে। এদ্বীপ থেকে পাশাপাশি চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে সাদা স্বর্ণ খ্যাত লবণ ও বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছসহ কাঁকড়া। যা বিদেশে রূপ্তানিযোগ্য ছিলো।
কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ভরাটের কাজে নিয়োজিত ড্রেজারের কারণে নাব্যতা হারার পথে মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী খাল কোহেলিয়া নদী! যে নদীর উপর দ্বীপের প্রায় ৭৫% বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ নির্ভরশীল। অদ্যাবধি অধিকাংশ প্রকৃত জমির মালিক কক্সবাজার এলও শাখা থেকে টাকা পায় নাই। অপরদিকে এমনও হয়েছে একজনের টাকা অন্যজন তোলে নিয়েছে। এ প্রকল্প কাজে নিয়োজিত ভারী যানবাহন চলাচলে ছোট্ট গ্রামীণ সড়কের অবস্থা বেহাল দশা!
বর্ষা মৌসুমে প্রকল্প সংলগ্ন গ্রামাঞ্চলের অবস্থা হয়েছিলো বণ্যার পানির মতো ভাসমান। অপরদিকে পশ্চিমের বেঁড়িবাধ ভাঙ্গণের ফলেও বঙ্গোপসাগর তীরে অবস্থিত পরিবারগুলি সাগরের পানির ঢেউয়ে মুখে! যাতে লোকজনের জীবনযাত্রা ছিলো খুবই নাজুক। অনেকেই খেয়ে না খেয়ে ছোট্ট শিশুদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপনের সময় অতিক্রম করেছিলো। বর্ষার পূর্বে তা সংস্কার বা মজবুত কাজ না করলে পানির নিচে থাকবে পুরো এলাকা।
অন্যদিকে প্রকল্পের জন্য বাস্তহারা পরিবারগুলির মধ্যে তালিকায় নাম থাকা স্বত্ত্বেও ৯/১০টি পরিবার পুনর্বাসনের বরাদ্ধকৃত বাড়ী থেকে বঞ্চিত! তালিকা প্রণয়নে নিয়োজিত এনজি সংস্থা বিবিসিএস এর এরিয়া ম্যানেজার মোঃ মফিজুল ইসলামের কারসাজি তথা অনৈতিক কর্মকান্ডের বিনিময়ে তাদের নাম বাদ পড়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তারা।
মাতারবাড়ী-ধলঘাটার সাধারণ মানুষ জানান, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নানান উন্নয়ন মূখি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা লক্ষ্যে আমরা স্বদিচ্ছাই জমি-জমা, ঘরবাড়ী দিয়ে নিঃশ্ব হয়েছি। তারপরও আমরা পদে পদে বিভিন্নভাবে হয়রানির স্বীকার হচ্ছি।
তাঁরা আরো জানান, মাতাবাড়ী-ধলঘাটার মানুষ পূর্বে যেভাবে নিজ এলাকায় কর্ম ব্যস্ততম সময় কাটাত! কিন্তু চলমান প্রকল্পের কারণে কর্মহীন হয়ে কর্ম খোঁজতে ভিনদেশে! সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী প্রকল্পে স্থানীয়দের বিভিন্ন কাজের অগ্রাধিকার দেয়া কথা! কিন্তু কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের ছাঁটাই করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিয়ত শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের ন্যায্য অধিকার পেতে বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধব করেছিলো। যা পেপার পত্রিকায়ও প্রকাশ হয়েছিলো। তাতে কোনরকম ফলশ্রুতি হয়নি। তাঁরা প্রতিকার পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজ জানান- মাতারবাড়ী মেগা প্রকল্পের জন্য এতদাঞ্চলের আজ করূন দশা! এহেন দূর্দশা থেকে এলাকাবাসীকে বাচাতে সড়ক সংস্কার, পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত স্লুইচ গেইটের ব্যবস্থা, পশ্চিমে টেকসই বেঁড়িবাধ নির্মাণ, স্থানীয়দের চাকরী ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের টাকা অবিলম্বে ব্যবস্থা করে সরকারে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট যৌক্তিক দাবী মনে করেন।
কেএইচ/এমএইচ/বাংলাবার্তা