নিজস্ব প্রতিবেদক: মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসরাফিল। তার প্রথম স্ত্রী মৃত খোদেজা বেগম ছিলেন নিঃসন্তান। অপরদিকে দ্বিতীয় স্ত্রী মৃত মনছুরা বেগমের একমাত্র সন্তান হলেন বিবি কুলসুম। তার স্থায়ী ঠিকানা ফেনীর সদর উপজেলার মাথিয়ারা গ্রামে।
মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসরাফিল ছিলেন একজন রেলওয়ে পুলিশ। চলতি বছরের ৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার বরাবর দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা ইস্রাফিলের কন্যা বিবি কুলসুমের একটি আবেদনপত্র বাংলাবার্তার হাতে আসে।
এতে বিবি কুলসুম উল্লেখ করেন, আমার পিতা মৃত মো. ইসরাফিল (হাবিলদার/৫৮৫) এর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়ার নিমিত্তে বাংলাদেশ পুলিশে ভর্তি ও কর্মস্থলের প্রত্যয়ণ পাওয়ার আবেদন। আমি বিবি কুলসুম, পিতা-মৃত ইসরাফিল হাবিলদার, মাতা-মৃত মনছুরা বেগম। আমার বাবার নাম মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা শীর্ষক পুস্তকের মুক্তিযুদ্ধে কর্মস্থল ত্যাগকারী পুলিশ সদস্যদের তালিকার ৮৫৩ নম্বর পৃষ্ঠা ও চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণক সবুজ মুক্তিবার্তা নং-০২১১০১০০০৬ এ লিপিবদ্ধ আছে। আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য ও পড়া-লেখা ভালো না জানায় আমার বাবার নামে সবুজ মুক্তিবার্তা নম্বরটি নৈরাজপুর গ্রামের ছায়েদুল করিম তার নামে লাল মুক্তিবার্তায় লিপিবদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণ করছে।
আবেদনপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিকে ছায়েদুল করিমের মৃত্যুর পর বর্তমানে তার স্ত্রী শিরিনা আক্তার এই মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণ করছেন। এখন বৈধ ও সঠিক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এই ভাতা পাওয়ার জন্য আমার পিতার সর্বশেষ কর্মস্থল হিসেবে চট্টগ্রাম জেলা থেকে প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন।
মুক্তিযোদ্ধা ইস্রাফিলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ ১৯৭৬ সালের ২৪ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম রেলওয়েতে পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অনুসন্ধানে দেখা যায় চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণক সবুজ মুক্তিবার্তা নং-০২১১০১০০০৬ এ মো. ইস্রাফিল হাবিলদারের নাম লিপিবদ্ধ আছে। তবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা লালবার্তার একই সিরিয়াল নম্বরে কাকতালীয়ভাবে দেখা যায় ছায়েদল করিমের নাম। যার ফলে বর্তমান তালিকা অনুযায়ী ছায়েদল করিমের স্ত্রী পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। যদিও ছায়েদুল করিম রেলওয়ে পুলিশ ছিলেন না।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা ইস্রাফিল হাবিলদারের প্রথম স্ত্রীর পালক কন্যা আলো মিন আক্তার প্রকৃত ওয়ারিশ সেজে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলনের চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তিনি না পারলেও একই বছর মুক্তিযোদ্ধা ইস্রাফিল হাবিলদারের পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় গ্যাজেটভুক্ত হয় ছায়েদুল করিমের নাম। সংশ্লিষ্টদের মতে আলো মিন আক্তারের অবৈধ চেষ্টার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছায়েদুল করিমের নাম মুক্তিযোদ্ধা ইস্রাফিলের স্থলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এদিকে মো. ইস্রাফিল হাবিলদারের প্রথম স্ত্রীর পালক কন্যা আলো মিন আক্তার প্রকৃত ওয়ারিশ দাবি করলেও ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মানিক স্বাক্ষরিত একটি পারিবারিক সনদপত্রে উল্লেখ করা হয়, কন্যা বিবি কুলসুম ছাড়া বর্তমানে মো. ইস্রাফিলের আর কোনো ওয়ারিশ নেই।