৭১ বছরে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সোহরবা সাহল
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কেএন দাস লেনের রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে এ দলটি। যে দলটির মাধ্যমে বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ। নানান আন্দোলন-সংগ্রাম পেরিয়ে ৭১ বছরে পা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বাংলার মানুষের মুক্তি, অধিকার আদায়ের লড়াই ও সংগ্রাম এবং দেশের উন্নয়নের জন্য গঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক এ দলটি। প্রতিষ্ঠার প্রায় ছয় বছর পর ১৯৫৫ সালে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। ফলে ‘আওয়ামী লীগ’ নামে বাঙালির লড়াই-সংগ্রামের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
 
১৯৬৬ সালে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার নেতৃত্বেই দলটি বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ।
 
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়। তার হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ ও দল।
 
১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ ২১ বছর বিরোধী দলে অবস্থান করে আওয়ামী লীগ। এরপর ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠন করে। এর আগে এই দলের আন্দোলন সংগ্রামেই প্রতিষ্ঠিত হয় সংসদীয় গণতন্ত্র। সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন করে।
 
২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিরোধী দলে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন ও নেতৃত্বশূন্য করতে বেশ কয়েকবার মারণাঘাত চালায় ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট। ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও ঝরে যায় অনেক আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ।
 
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।
 
এ সময় মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার, বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার ২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৫ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের ভাগ্যের চাকা সচল করতে থাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
 
এছাড়া, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবার জন্য সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কম্যুনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন ও বেকারত্ব ঘুচিয়ে দারিদ্র্যের হার অনেক নীচে নামিয়ে আনা হয়।
 
পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোটের শত প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।
এর ধারাবাহিকতায় দেশের জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারি ২০১৯ শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
 
বর্তমানে নির্বাচনি অঙ্গীকার অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর সুখী, সমৃদ্ধ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়াসহ বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে দলটি।
 
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেসহ আরো বড় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। দেশের আইটি খাতের নতুন সম্ভাবনা যশোরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ করা হয়েছে।
লেখক: সহ-সম্পাদক, বাংলাবার্তা

এসএস/এমএইচ/বাংলাবার্তা