মোহাম্মদ রাসেল
আমরা, বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ মিষ্টি পানের স্বর্গভূমি মহেশখালীর সাড়ে চার লক্ষ মানুষ অস্তিত্বের সাথে বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পক্ষে। আগেই বলেছি আমরা “অস্তিত্বের” সাথে উন্নয়নের পক্ষে। সাড়ে চার লক্ষ মানুষের অস্তিত্বকে বিনাশ করে উন্নয়ন কারো কাম্য নয়। সুতরাং আমরা নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্বহীন উন্নয়নে পক্ষে নয়।
আমরা চাই না, এই দ্বীপে মানুষের বসতি, মিষ্টি পানের বাম্পার ফলন, চিংড়ি কাঁকড়ার বিচরণ প্রাকৃতিক শ্বেত লবন হারিয়ে যাক। আমরা কামনা করিনা, পুরো দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ হিসেবে খ্যাত এই দ্বীপের জীববৈচিত্র্যর ইতিহাস মুছে যাক। আমরা কখনোই কামনা করিনা, সোনাদিয়া থেকে আহরিত শুটকির সুনাম হারিয়ে যাক।
অন্যান্য এলাকার নামের মতো যেমন কালমাদিয়া, চরদিয়া, সাগরদিয়া নামকরণ হতে পারতো এই সোনাদিয়ার। কিন্তু ঐসব নামে নামকরণ না হয়ে সোনাদিয়া হয়েছে কেন জানেন? এই সোনাদিয়ায় যা ভাসে তা পানি নয় পানির রং এ ‘সোনা’ তাই নাম হয়েছে ‘সোনাদিয়া’ (এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত) ঐ সোনাকে পুড়িয়ে কয়লা করা আমাদের কখনোই কাম্য নয়।
আমরা মাতারবাড়ী, ধলঘাট, সোনাদিয়া এই তিনটি উপদ্বীপসহ পুরো মহেশখালী দ্বীপের মানুষ আমাদের আবাদি জমি, উৎপাদিত লবণ, মিষ্টি পান, চিংড়ি, কাঁকড়া, শুটকি নিয়ে গ্রামীণ জেলে জীবন নিয়ে অস্তিত্বের সাথে বেঁচে থাকতে সন্তুষ্ট। অস্তিত্ববিহীন উন্নয়নের ছোঁয়া আমাদের কখনোই কাম্য নয়। আমরা উন্নয়নের পক্ষে কিন্তু নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করে দেশের উন্নয়ন কি ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চাকে মেরে প্রথম ও দ্বিতীয় বাচ্চাকে সবল করার সামিল নয়? আমাদের বিলীন করে পুরো দেশের উন্নয়ন কি আমরা চেয়েছিলাম…?
দেশের অগ্রগতির উন্নয়নের ছোঁয়া, মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার টুকু কি এই দ্বীপের সাড়ে চার লক্ষ মানুষের নেই?
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম জোগান দাতা এই দ্বীপের মানুষ। মিষ্টি পান, লবণ, চিংড়ি উৎপাদনে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে দেশের খ্যাতি ছড়িয়েছে এই দ্বীপের মানুষ তাদের রক্ত ঝরা পরিশ্রমের মাধ্যমে। তাহলে কেন দেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অস্তিত্বের সাথে মুক্তবাতাস নিয়ে সামিল হওয়ার অধিকারটুকু কেড়ে নেওয়া হচ্ছে আমাদের?
এই দ্বীপে সাক্ষরতার হার ৩১%। সেই ৩১% এর শিক্ষিতরা দেশের এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে নিজেদের যোগ্যতার সাক্ষার রাখছেন না। দেশের সর্বোচ্চ দপ্তর থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলেও নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। ১৫০.০০ বর্গমাইলের বুকচিরে ১৫ টি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প জীববৈচিত্র্য ও আমাদের অস্তিত্বের জন্য যে কতোটা ক্ষতি বয়ে আনবে তা বুঝার ক্ষমতা এই দ্বীপের ৩১% শিক্ষিতসহ সকলের রয়েছে। তারপরেও আমরা চুপ করে আছি, চুপ করে থেকেছি শুধুমাত্র উন্নয়নের পক্ষে বলে। আমরাও চাই অস্তিত্বের সাথে বাংলাদেশ সরকারের এই উন্নয়নের মহাযজ্ঞে নিজেদের সামিল করতে।