আরাফাত হাসান
ncov2019.live নামের যে ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে বর্তমানে COVID-19 প্রাদুর্ভাবের পরিসংখ্যান সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছেন সিয়াটল অঞ্চলের শিফম্যান নামের এক কিশোর। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে এটি চালু করার পর থেকে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করেছে প্রায় এক কোটি বিশ লাখ মানুষ।
১৭ বছর বয়সী অভি শিফম্যান ওয়েবসাইটটি তৈরীতে বেশ কিছু সময় এর পেছনে ব্যায় করেন। তার এই ওয়েবসাইটটি সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতি দশ মিনিট অন্তর হালনাগাদ করে। তবে সাইটটি এখন নিশ্চিত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, আশঙ্কাজনক করোনা রোগীর সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এমন রোগীর সংখ্যার তথ্য বিশ্বের প্রতিটি দেশ থেকে সয়ংক্রীয়ভাবে সংগ্রহ করে প্রতি এক মিনিট অন্তর হালনাগাদ করে।
এসব তথ্য বৈশ্বিক ভাবে এবং দেশ ভিত্তিক উভয় রকমেই সাজানো থাকে। এছাড়াও এই সাইটটি একটি ইন্টারেক্টিভ গুগল ম্যাপ, একটি টুইটার ফিড, ভ্রমণ সম্পর্কিত পরামর্শ, করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য এবং এর প্রতিরোধের উপায়ের পাশাপাশি কোয়ারেইন্টানের জন্য প্রস্তুতির টিপসও দিয়ে থাকে।
অভি শিফম্যান বলেন, “আমি খ্রীস্টমাসের সময় থেকে এই প্রজেক্টের জন্য কাজ শুরু করি, তখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো মাত্র এক হাজার, তাও এর জন্মস্থল চীনের বাইরে কোনো রোগী ছিলোনা। ঠিক কী হচ্ছে তা নিয়ে স্পষ্ট, সঠিক এবং সংক্ষিপ্ত তথ্য পাওয়া কঠিন ছিলো তখন। তাই আমি এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম।”
একসাথে বিভিন্ন কোডিং প্রকল্পে কাজ করা শিফম্যান এই কাজটি বিশেষভাবে করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ এটি তাকে ওয়েব স্ক্র্যাপিং প্রযুক্তি শিখতে সাহায্য করবে। শিফম্যান জানান, এই ওয়েব সাইটটি বিশ্ব সাস্থ্যকে সাহায্য করার একটা মাধ্যমও হতে পারে। এমন কিছু প্রয়োজন ছিলো কারণ সরকারগুলো সঠিক তথ্য নাও দিতে পারে। তাছাড়া সঠিক তথ্য পাওয়া কিছুটা কঠিনও বটে।
শিফম্যানের ওয়েবসাইটটি সরকারী স্বাস্থ্য সংস্থা (স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক), এবং বিশ্বাসযোগ্য নিউজলেটগুলি সহ অনেকগুলু বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য স্ক্র্যাপ করে। তিনি এটি করার জন্য নিউজ কিউরেটরগুলির একটি অনলাইন কমিউনিটির উপর নির্ভর করেন। শিফম্যান তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য তথ্যগুলো ক্রসচেক করতে ওয়েবসাইটটি কোড করেছিলেন।
শিফম্যান বলেন, “এটি সম্পূর্ণ সয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয়, তাই আমাকে ম্যানুয়ালি কোনো তথ্য ইনপুট করতে হয় না। আমি যখন ঘুমাই, তখনও ওয়েব স্ক্র্যাপারটি কাজ করে যায়।” তিনি আরও জানান, আঞ্চলিক প্রাদুর্ভাবের পরিসংখ্যান, গ্রাফ, ঐতিহাসিক মহামারীগুলোর সাথে তুলনা, একটি ভ্যাকসিন ট্রেকার এবং ত্রিশটি ভাষায় ওয়েবসাইটটি অনুবাদ করা সহ ncov2019.live ওয়েবসাইটটি পরিকল্পিতভাবে উন্নত করা হয়েছে।
শিফম্যান বলেন, “আমি প্রতিদিন অন্তত এক হাজার বার্তা পাচ্ছি। কেউ কেউ সাইটের জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, কেউবা মিডিয়া থেকে সাক্ষাতকারের জন্য আমার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, অনেকে আবার পিএইচডি’র জন্য বিভিন্ন তথ্য চাচ্ছেন।”
এমনকি কেবল ইংরেজিতেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের কিছু কম সংখ্যক সহ সাইটটি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ থেকে পৃথক পৃথক লোক ভিজিট করে থাকে।
শিফম্যান এবং তার সাইটটি সম্পর্কে মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর এর দর্শনার্থীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রথম মিলিয়নে পৌঁছতে এর এক মাস সময় লেগেছিল, কিন্তু এর পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এই সাইটটি ৩.২ মিলিয়ন লোক পরিদর্শন করেছে।
হ্যাকাথনে অংশ নিতে বিশ্ব ভ্রমণ করার জন্য হাইস্কুলের পরে এক বা দু’বছর ছুটি নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এই কিশোরের। একজন উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী শিফম্যান। তবে তিনি জানান তার মুনাফার প্রয়োজন নেই, সৃজনশীল কিছু করাটাই লক্ষ্য কেবল।
শিফম্যান বলেন, “বিশ্বকে বদলে দিতে পরবর্তী বড় চ্যালেঞ্জটা নেয়ার জন্য আমার ভালো দক্ষতা থাকা চাই। আমি কাউকে অনুকরণ করতে চাইনা। আমি পরবর্তীতে কেবল অভি শিফম্যান ই হতে চাই।”
চিকিৎসক মা এবং জীববিজ্ঞানী পিতার বড় সন্তান শিফম্যান। শৈশবে তাকে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হয়েছে। সেসময় ইসরায়েল, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য সহ আমেরিকার ছয়টি রাজ্যে তাকে বসবাস করতে হয়েছিলো। সাত বছর বয়স থেকে কোডিংয়ের প্রতি তার আগ্রহী শিফম্যান।
সূত্র: The Seattle Times&DEMOCRACY NOW!
এমডি/ এমএইচ/ বাংলাবার্তা