রাবি প্রতিবেদক
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে করোনা ভাইরাস। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের তিনজনের শরীরে শনাক্ত হয়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। ফলে সারাদেশের মত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ব্যাপক হারে সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার ছাড়া দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কথাও বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হলেও শিক্ষার্থীদের অনেককে একসাথে ক্লাস করতে হচ্ছে। ক্যাম্পাসের খাবারের দোকনে বসতে হচ্ছে। হলের ডাইনিং ক্যান্টিনে জনসমাগমে বসে খাবার খেতে হচ্ছে। তাছাড়া ক্যাম্পাসে বিকাল হলে বহিরাগতদের সমাগম তো আছেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের প্রতিটি কক্ষে গড়ে তিন থেকে চারজন এবং গণরুমগুলোতে ১০০ থেকে ১২০ জন শিক্ষার্থী একসাথে থাকেন। ফলে কোনো শিক্ষার্থীরা করোনায় আক্রান্ত হলে এটির ব্যাপক সংক্রমণ ঘটবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পাঠ্য কার্যক্রমের বাহিরেও প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু স্থানে খাওয়া দাওয়া ও রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে শিক্ষার্থীরা সমবেত হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে করমর্দনও করছেন তারা। তাই মহামারি আকারে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে মেয়েদের হল থেকে বিশ^বিদ্যালয় কর্মরত সাংবাদিক মারজিয়া আক্তার জানান, মেয়েদের প্রত্যেক হলেই গণরুম আছে। কয়েকটা হলে একের অধিক গণরুম আছে যেখানে প্রত্যেক রুমে ১০০ থেকে ১২০ জন মেয়ে একসাথে থাকেন। তিনি আরও জানান, গণরুমে মেয়েদের এক বেডে দুইজন করে থাকতে হয়। তাছাড়া রুমগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না। অনেক গাদাগাদি ভাবে তাদের থাকতে হয়। এখানে একবার সংক্রমন ব্যাধি আসলে নিমিষেই সবাই আক্রান্ত হয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের শিক্ষার্থী স্বরনালি আক্তার বলেন, হলগুলোতে আমাদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। এখানে কেউ যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে সবার মধ্যেই এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে এই আতঙ্কে আছি। করোনা প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া উচিত।
এদিকে, করোনা ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার ছাড়া দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষকে।
বিশ^বিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. তবিবুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্ত বা এর চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা মেডিকেল সেন্টারের নেই। যদি কেউ আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠাতে হবে। আর বিশ^বিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, করোনা যেহেতু এখনও রাজশাহীতে দেখা যায়নি। সেজন্য হয়ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো এখনও বন্ধ করা হয়নি। তবে আমাদের সর্বোপরি সবারই সাবধান থাকতে হবে।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সকল হলের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকার আহবান জানানো হয়। লক্ষণ দেখা দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে পরামর্শ নেওয়ার কথাও বলেছেন তারা।বন্ধের বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু সাঈদ মো.নাজমুল হায়দার বলেন, আমার মতে বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ হওয়া উচিত। সারাবিশ্বই যখন অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে, তখন ঘনবসতিপূর্ণ এই বাংলাদেশে কেন নয়? মনে রাখতে হবে, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। একবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করোনা ভাইরাসের বিস্তার শুরু হয়ে গেলে তা ঠেকানো খুব দূরুহ হয়ে যাবে। তাই সরকারের নীতি নির্ধারকদের উচিত হবে অতি শীঘ্রই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা। অন্ততপক্ষে আগামী ২-৩ সপ্তাহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি তাদের রুমে থাকে এবং বিদেশফেরত কারো সংস্পর্শে না আসে তাহলে এটি নিয়ে এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর যদি কেন্দ্র থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হয় তাহলে বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ হবে। সর্বোপরি তিনি শিক্ষার্থীদের সচেতন ও সাবধানতা অবলম্বেন করতে বলেন।
এসএস/এমএইচ/বাংলাবার্তা