বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সাধারণত ছেলেরা মেয়েদের তুলে নিয়ে জোর করে বিয়ে করার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে থাকে। তবে এবার রাজশাহীতে ঘটেছে ভিন্ন এক ঘটনা। রাজশাহীতে সুরুজ বাসফর (২৬) নামে এক যুবককে তুলে নিয়ে জোর করে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। তবে বিয়ের নিবন্ধন করা হয়নি। হিন্দু ধর্মের প্রথা অনুযায়ী মাথায় সিঁদুর দিয়ে এই বিয়ে হয়েছে।
এ ঘটনায় সোমবার রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন সুরুজ বাসফর।
গত শনিবার সুরুজ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তার বাড়ি রংপুর। তিনি রামেক হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন। বাবু হেলা নামে রামেক হাসপাতালেরই রান্নাঘরে দায়িত্বরত চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর মেয়ের সঙ্গে গত শনিবার তার বিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন সুরুজ।
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে তিনি সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।
সেখানে সুরুজ জানান, তিনি হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকেন। পাশেই কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে থাকেন বাবু হেলা। তার স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে নন্দিনী হেলার সঙ্গে বিয়ের জন্য তাকে প্রস্তাব দেয়া হয়। তিনি সেই প্রস্তাব নাকচ করেন। এরই মধ্যে তিনি কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে নতুন বাসা খুঁজতে শুরু করেন।
গত শনিবার বাবু হেলার স্ত্রী রাখি হেলা এবং মেয়ে নন্দিনী হেলা তাকে বাসা দেখানোর নাম করে হাসপাতাল থেকে ডেকে নিয়ে যান। অটোরিকশায় ওঠার পর হঠাৎ অপরিচিত দুই যুবকও অটোরিকশায় ওঠেন। তারা জোর করে তাকে হড়গ্রাম শিবমন্দিরে নিয়ে যান। সেখানেও আগে থেকে ৭-৮ জন যুবক অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু মন্দিরে ছিলেন না কোনো ঠাকুর।
সুরুজ দাবি করেন, মন্দিরের সামনে তাকে অস্ত্রের মুখে নন্দিনীর মাথায় সিঁদুর দিতে বাধ্য করা হয়। তখন সেই ছবি তোলা হয়। এরপর থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে নন্দিনীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে গেছে।
সুরুজ বলেন, এই ঘটনার পর থেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি কখনও বাবু হেলার বাসায় যাননি। নন্দিনীকেও তার বাসায় নিয়ে যাননি। তিনি এই বিয়ে মানেন না।
সুরুজ বলেন, এ ব্যাপারে তিনি প্রথমে রামেক হাসপাতাল কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগ করেন। তারপর থেকে নন্দিনীর পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। আর তার মামা এবং বোন এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গেলে তাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এ সময় তাদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ করেন সুরুজ বাসফর।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরদিনই তিনি রাজপাড়া থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে অভিযোগ করতে চান। কিন্তু কোনো ছেলেকে তুলে নিয়ে বিয়ে করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। কয়েকদফা থানায় ঘুরে তিনি অভিযোগ করতে পেরেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুরুজ বাসফরের মামা শ্রী তাজ এবং সহকর্মী জনি প্রামাণিক উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে বাবু হেলাকে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন না ধরার কারণে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি শাহাদাত হোসেন খান বলেন, নিবন্ধন না হলে তো আইনগতভাবে বিয়ের কোনো ভিত্তি নেই। এটা প্রথা অনুযায়ী হতে পারে। আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।