আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন মার্কিন বুদ্ধিজীবীরা। মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দার্শনিক নোয়াম চমস্কি ২০১৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট ও রাশিয়ার মধ্যে কোনো যুদ্ধ হলেই তা পরমাণু যুদ্ধে রূপ নেবে। এর মাধ্যমে মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে।
গত ৩১ জানুয়ারি মার্কিন সাপ্তাহিক নিউজউইকে’র প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ’২০১৯ সালের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত ২৯টির বেশি দেশে ৯৩টি সামরিক মহড়া চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থলযুদ্ধ থেকে সাইবার যুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন সামরিক কৌশলের এ অনুশীলনের লক্ষ্য ইরান বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ নয়। বরং রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবেই এ মহড়ার অনুশীলন করা হয়েছে।
২০১৪ সালের মার্চে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়ার পর থেকে রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক নেই।
যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে উভয় দেশই তাদের সামরিক তৎপরতা বিপুল পরিমাণে বাড়িয়েছে বলে এ প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।
২০১৯ সালের অক্টোবরে ন্যাটোর পার্লামেন্টারি কমিটির এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে, ‘ইউরোপীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতির ক্রম অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট (ন্যাটো) নাটকীয়ভাবে বাড়িয়েছে তাদের সামরিক তৎপরতা। এদিকে এর প্রতিক্রিয়ায় থেমে নেই রাশিয়াও।
রুশ হুমকি মোকাবেলায় পূর্ব ইউরোপে যথেষ্ট পরিমাণে ন্যাটোর স্থলসেনা না থাকায় প্রতিবেদনে কমিটি তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে। তবে সামরিক দক্ষতা ও সরঞ্জামের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়াকে অতিক্রম করেছে বলে প্রকাশ করা হয়।
এদিকে গত বছরের অক্টোবরেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জানায়, ২০২০ সালে ইউরোপে ন্যাটোর পরিচালনায় একটি সামরিক মহড়ার আয়োজন করা হবে।
ইউএস ইউরোপিয়ান কমান্ড (ইউরোকম) জানায়, ৩৭ হাজার সেনার অংশগ্রহণে ২০২০ সালের এপ্রিল ও মে মাসে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।
ইউরোকম জানায়, ‘শীতল যুদ্ধে’র সময়ে ন্যাটোর ‘রিটার্ন অব ফোর্সেস টু জার্মানি’ (রিফোরজার) সামরিক মহড়ার আদলেই এ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত শীতল যুদ্ধকালীন সময়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর পূর্ব ইউরোপে অনুষ্ঠিত বিশেষ মহড়া রিফোরজার হিসেবে পরিচিত।
১৯৮৮ সালে বিশেষ এ মহড়ায় সর্বোচ্চ এক লাখ ২৫ হাজার সেনা অংশ নেয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর এ ধরনের মহড়ার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। ১৯৯৩ সালে শেষবারের মতো রিফোরজার মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
‘রিফোরজার’ মহড়ার আদলে এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘দ্যা ডিফেন্ডার ইউরোপ-২০’ নামের এ মহড়াটি গত ২৫ বছরে মার্কিন বাহিনীর বৃহত্তম সামরিক মহড়া বলে জানানো হয়।
ইউরোকম তাদের বিবৃতিতে জানায়, জার্মানি ও পোল্যান্ডসহ মোট ১০টি ইউরোপীয় দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ মহড়ায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক ডিভিশন পদাথিক সেনা, তিন ব্রিগেড ট্যাংক ও অন্য বাহিনীর সেনারা অংশ নেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন মহড়ার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়াও পূর্ব ইউরোপে তাদের সামরিক উপস্থিতি ও তৎপরতা বাড়িয়েছে।
রুশ বার্তা সংস্থা তাস’এ প্রকাশিত গতবছরের জুনে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত তিন বছরে রাশিয়া তাদের সামরিক সামর্থ্য দশ গুণ বাড়িয়েছে।