নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজারের চকরিয়ায় লকডাউনে খাদ্য সংকটে পড়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবিরের পরিবার। জমিদারপুত্র হুমায়ুন ভূমিদস্যুদের কবলে পড়ে সম্পদও হারিয়েছেন।
প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোন সমাধান পায়নি বাকশাল নেতার এই পরিবারটি। এ নিয়ে ৪ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে আসেন তার মেয়ে।
জানা যায়, হুমায়ুন কবিরের মূল নাম দীলিপ কুমার দাশ। ১৯৮০ সালে তিনি ধর্মান্তরিত হন। তার পূর্বের বাড়ি ছিল চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর কলাউজান গ্রামের মহাজন পাড়ায়। তার পিতার নাম ছিল মৃত জ্যোতিষ দাশ। বর্তমানে কক্সবাজারে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের মুসলিম পাড়ায় স্ত্রী, এক ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
হুমায়ুন কবিরের মেয়ে জানায়, অবসরে থাকা শিক্ষক হুমায়ুন আহমেদের আয়ের কোন উৎস নেই। একমাত্র ছেলে টিউশনির মাধ্যমে যা আয় করত লকডাউনের এই পরিস্থিতিতে পড়ে সে পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সংকটে দিনাতিপাত করছে পরিবারটি।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে এক নম্বর সেক্টরে গেরিলা বাহিনীর গ্রুপ কমান্ডার একেএন শামসুল ইসলাম ও কমান্ডার মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ন কবির।
স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছরে এসে সম্প্রতি তার নাম মুক্তিযুদ্ধের যাচাই বাছাই তালিকায় উঠে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে এখনও কোন সাহায্য সহযোগিতা পাননি তিনি।
এদিকে তাঁর সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া তার বড় ভাই আশুতোষ দাশ মহাজনকে ১৯৭৫ সালের ৮ই মার্চ শনিবার দুপুরে কলাউজান গৌরসুন্দর মহাজন বাজারে প্রকাশ্যে দিবালোকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে সিরাজ সিকদার বাহিনী। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধা আশুতোষ দাশ হত্যার দায়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ৩৯৬ জি.আর-৫৪/৭৫, সি.এস-৯২)।
এ ঘটনার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হুমায়ুন কবিরকে লাইসেন্সসহ ২টি বন্দুক ও ২টি পাসপোর্ট উপহার দেন এবং নিজেই মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির ও তাঁর বড় ভাই আশুতোষের পরিবারের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেন। কিন্তু পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর এই পরিবারটির খোঁজ নেয়নি কেউই।
উল্টো সেনা সরকারের রোষানলে ও ভূমিদস্যুদের কবলে পড়ে হারিয়েছেন সকল ভূসম্পদ। তার পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত কয়েক কোটি টাকার ভূসম্পদ জবর দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। ফলে প্রায় ৪০ বছর ধরে ভাড়াটিয়া হয়ে কুঁড়েঘরে মানবেতর দিনাতিপাত করছে এই পরিবারটি।
মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির বলেন, ১৯৭৫ সালের ২১ই আগস্ট ২৫০ জন সেনাবাহিনী পৈত্রিক বাড়ি থেকে আমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তিন দিন ধরে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি আর্মি ক্যাম্পে আটকে রেখে ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি না করার জন্য মুচলেকা নেয়।
তার দাবি, চট্টগ্রামের কলাউজান, লোহাগাড়া, কক্সবাজারে চকরিয়া উপজেলা হারবাং ও মানিকপুরের প্রায় ৭৭ একর জমি থাকলেও বর্তমানে এক কড়া জমিও তাদের দখলে নেই।
মুক্তিযোদ্ধাকন্যা বলেন, হারবাং ইউনিয়নের রোসাঙ্গপাড়া এলাকার শামসুল ইসলামের পুত্র সাইফুল ইসলাম টিটু তার থেকে ৮০ শতক জমি জবর দখল করে নিয়েছে।
এফএস/এমএইচ/ বাংলাবার্তা