ভারতের অসন্তোষের ঝাঁজ যাতে বাংলাদেশে না আসে
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
৭১ এবং ৭৫’র মতই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ জাতীয় সংগঠন ‘বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নে’র সহ-সভাপতি ও নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ।
ভারতের অভ্যন্তরে সংঘটিত নাগরিকপঞ্জি’ বা এনআরসি’কে ঘিরে অসন্তোষের কোন ঝাঁজ বা আশংকার ঢেউ যাতে বাংলাদেশ না আসে সেজন্য ভারত সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন এই পেশাজীবী নেতা।
রিয়াজ হায়দার চৌধুরী চট্টগ্রাম মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট সদস্য এবং চট্টগ্রামের পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদকও। তিনি মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমকর্মীদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চেরাগী পাহাড় এলাকায় ঐতিহ্যবাহী আবৃত্তি সংগঠন ‘বোধন’র সমাবেশে বক্তব্যকালে একথা গুলো বলেন ।
এই পেশাজীবী ও নাগরিক সংগঠক মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার, বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধীর অবদানকে কৃতজ্ঞতা সহকারে স্মরণ করে বলেন, ১৯৭১সালে মুক্তিযোদ্ধা ও ৭৫এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিরোধযোদ্ধাদের সহযোগিতা দিয়ে ভারত যেমন বাংলাদেশের বাঙালিদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক তেমনি করে রোহিঙ্গা ইস্যু কিংবা অন্য যে কোন ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে ভারত দাঁড়াবে-এমন প্রত্যাশা আমরা বাংলাদেশের জনগণ করতেই পারি। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে মিয়ানমার, চীন কিংবা যে কোন বিশ্ব মোড়লের নেতিবাচকতা কাটাতে দু’দেশেরই ঐক্য কাঙ্ক্ষিত।
বোধন সভাপতি আব্দুল হালিম সভাপতিত্বে সমাবেশটিতে আরো বক্তব্য রাখেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মাহফুজুর রহমান, ডাঃ সুলতানুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ ফাহিম উদ্দিন আহমেদ, দেওয়ান মাকসুদ আহমেদ, মোহাম্মদ জাবেদ, মোঃ হারিস মোঃ বাকি, ও জামাল খান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমন, বোধন সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নারায়ন প্রসাদ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী প্রমুখ ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধ ও ১৫ আগস্টের শহীদদের বিনম্রচিত্তে স্মরণ করে পেশাজীবী নাগরিক সংগঠক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের আত্ম স্বীকৃতি, মর্যাদা, ও অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে কালের জাগরণের নাম । এই জাগরণে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের ; বিশেষ করে দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক কর্মীদের অবদান রয়েছে।এর মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তিভুমি চেতনার যে আদর্শিক প্রদীপ, সেটি প্রজ্জ্বলিত হয়েছিল ,যে চেতনা আমাদের ক্রমান্বয়ে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার সংগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তর করে। যুদ্ধপরবর্তী প্রায় ৫ দশকের যে বাংলাদেশ, অসাম্প্রদায়িক কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে টানা সংগ্রাম: সেই সংগ্রামে দিবারাত্রি শ্রম দিয়ে মেধা দিয়ে নিবেদিত ভূমিকার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের বেদনাকে লালন করে স্বপ্নকে প্রজ্বলিত রেখেছেন আমাদের আদর্শিক অভিভাবক ও আস্থার সর্বোচ্চ ঠিকানা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ।
শুদ্ধি অভিযানকে আরো জোরদার করতে নাগরিক সহযোগিতা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের পরে আজ যে বিজয় অর্জন উদযাপন কিংবা আমাদের যে অর্জন তা বিনাশ হয়ে যাবে, সমুলে উৎখাত হয়ে যাবে, যদি আমরা আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে না পারি ,ধারণ করতে না পারি , যদি না আমরা আমাদের রাষ্ট্রের যে শুদ্ধি অভিযান চলছে, ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে , কালোটাকার বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং মাদক জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, আমাদের যে টানা সংগ্রাম, আমাদের যে স্বাপ্নিক যাত্রা, সে যাত্রায় আমরা সফল যদি হতে না পারি। এই সংগ্রাম, এই প্রত্যয় ব্যর্থ হয়ে যাবে, যদি আমরা সবার যোগে হাতে হাত রেখে এক যোগে এই কল্যাণরাষ্ট্রের মর্যাদা বিশ্বমানচিত্রে তুলে ধরতে না পারি।
রিয়াজ বলেন, আমরা বিগত পাঁচ দশকে অনেক কিছুই অর্জন করেছি। স্বৈরাচারের দাবানল হটিয়ে গণতন্ত্রের মানসকন্যা গণতন্ত্রের আদর্শিক অভিযাত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পিতাকে হারিয়ে,মাতাকে হারিয়ে,ভাইকে হারিয়ে, ভাতৃবধূকে হারিয়ে, নিকটাত্মীয়দের হারিয়ে শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমাদের এই স্বপ্নের রাষ্ট্রকে বিনির্মাণ করে চলেছেন।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বিশ্ব স্বীকৃতি আদাযসহ ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে ভারত সরকার ও মিত্রবাহিনীর যে অবদান তা স্মরণ করে ভারতের শুভশক্তিকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন নিকট প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের মধ্যেও নাগরিক পঞ্জির নামে যে অসহিষ্ণুতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। আমরা বন্দর শহরের, এই দেশের নাগরিক হিসেবে মনে করি , এনআরসি প্রক্রিয়ার আড়ালে ভারতের অভ্যন্তরে মিয়ানমার চীনের কোন অনুপ্রবেশকারী কিংবা মার্কিন মুলুকের কোনো অপশক্তির অনুপ্রবেশজনিত অপতৎপরতার চেষ্টা রয়েছে । তাই আজ আমাদের এই বিজয় দিবসের আনন্দ উদযাপনের লগ্নে ভারত মাতার কাছে, ভারতের সেই শুভ শক্তির কাছে, ইন্দিরা গান্ধীর দেশের কাছে, আমরা বন্দর শহর চট্টগ্রামের, বাণিজ্য শহরের নাগরিক হিসেবে আবেদন জানাতে চাই, সংকটে যেন ভারত আমাদের পাশেই থাকে।
প্রাসঙ্গিকভাবে রিয়াজ এও বলেন, , ১৯৭১ ভ্রাতৃপ্রতিমপ্রতিম সম্পর্কের মত জাতির পিতাকে হারানোর পরে এদেশের অনেক বীরযোদ্ধা প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ভারতে অবস্থান নিয়েছিলেন । সেইসব দুসময়ের সহায়তা দেয়া ভারত মাতার কাছে তাই যে কোন সংকটে পাশে পাবার আশা করতেই পারি ।’