মুমিন মাসুদ
বাঙ্গালির বোধদয় নামে কোন বই আছে কী? জানা নেই। তবে যতদিন না দেয়ালে পিঠ ঠেকছে তাদের বোধদয় ঘটাতে এবং বুঝাতে স্বয়ং মহাদেবও ব্যার্থ হবেন বলে বিশ্বাস। হুট করেই (পজেটিভ) কিছু এডপ্ট করতে না পারাটা আমাদের শিক্ষাগত দূর্বলতা। আবার দীর্ঘদিনের পূরনো অভ্যাস খারাপ জেনেও ছাড়তে না পারাটা আমাদের অতীত-প্রীতির কথা প্রমাণ করে। তাই থিউরিটিক্যালি বাঙ্গালী কখনো “মডার্ন ম্যান” হতে পারবে না বা পারছে না।
এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুক্তিযুদ্ধকে যদি দেখি তখন বলতে হয়, বাঙ্গালীর দেয়ালে পিঠ আর পিঠে পেট (দুর্ভিক্ষ) না ঠেকলে কখনো অস্ত্র ধরতোনা। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর ডাকে তারা যুদ্ধে যায়নি। নিজের ঘরে শত্রু ঢুকে যখন প্রত্যেকের পাছায় ছ্যাঁকা দিল তবেই তারা অস্ত্র ধরেছে। নিজেদের অধিকার বলতে কিছু থেকে থাকলে তা শুধু দুই লোকমা পান্তা ভাত ও একটু পোড়া মরিচ। এর বাইরে সে চিন্তা করেনা। এ থেকে এই জাতি পরিত্রাণের উপায় নেই। ব্রিটিশরা এই দূর্বলতা ধরতে পেরেছিল আর পাকিস্তানিরা পারেনি।
বঙ্গবন্ধু প্রীতি এবং স্বদেশ প্রেমের কারণেই যদি বাঙ্গালি অস্ত্র ধরে মরনকে জয় করতে শেখে থাকে, তাহলে সেই উদ্দীপনা ‘৭৫ এ গেলো কই? কিছু গোলা হীন ট্যাংকের ভয়ে এত্তগুলো ফৌজ অস্ত্র নিয়ে ব্যারাকে বসে ছিল যারা কিনা গোলা পূর্ণ পাকিস্তানি ট্যাংকের সামনে বুক চেতিয়ে লড়েছে! আসলে ততদিনে এই বাঙ্গালির পাতে পান্তাভাত আর পোড়া মরিচ জুটে গিয়েছিল। তাই সে নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌলাকে যেভাবে আফসোস করে “আহ” শব্দের বিপরীতে সকল বিদ্রোহ নিজের একফোঁটা অশ্রুর মাধ্যমে জ্ঞাপন করেছিল ‘৭৫ এ ও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
চলমান কিংবা সামনের দিনগুলোতেও প্লেটে ও পেটে ভাতের অস্তিত্ব পেলে সাধারণ বাঙ্গালী চুপ থাকবে। ভাত দাও, লাথি মারো, সে হাসিমুখে নিবে। তাইতো এদেশে প্রচলিত প্রবাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ “দুধাল গাই, লাথি দিলেও ভালা”।
লেখক: সাবেকসহ-সভাপতি, চট্টগ্রামবিশ্ববিদ্যালয়সাংবাদিকসমিতি
এসএস/এমএইচ/বাংলাবার্তা