পর্যটকশূন্য কক্সবাজার, তিন দশক পর জন্মেছে সাগরলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক


করোনা ভাইরাসের কারণে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এখন পর্যটকশূন্য। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সেখানে যাতায়াত নিষিদ্ধ। এই সুযোগে প্রায় তিনদশক পরে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নিয়েছে সাগরলতা। এমনকি বালিয়াড়ি সৃষ্টির কাজও শুরু করে দিয়েছে পর্যটকদের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া লতাটি!


বালিয়াড়িকে সৈকতের রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি সাগরে ঝড়-তুফান বা ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসকে ঠেকিয়ে রাখে। আর বারবার ঢেউ আছড়ে পড়ায় মাটির ক্ষয়রোধ এবং শুকনো উড়ন্ত বালুরাশিকে আটকে বড় বড় বালির পাহাড় বা বালিয়াড়ি তৈরির মূল কারিগর হল সাগরলতা। সাগরলতাই বালিয়াড়ির প্রধান উদ্ভিদ।
একসময় কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ধরে ২০-৩০ ফুট উঁচু পাহাড়ের মতোই বড় বড় বালির ঢিবি ছিল। সাগরলতার গোলাপি-অতিবেগুনি রঙের ফুলে সৈকতে এক অন্যরকমের সৌন্দর্য তৈরি হতো।


এছাড়া কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে কলাতলী পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও অন্তত ৫০০ ফুট চওড়া একটি ডেইল ছিল। যেখানে থরে থরে ফোটা সাগরলতার ফুল দেখা যেত।
কিন্তু দেশের পর্যটন শিল্পের কারণে দখল ও দূষণের শিকার হয়ে বিগত ৩ দশকে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতের বড় বড় বালিয়াড়িগুলো প্রায় হারিয়ে গেছে। এসব বালিয়াড়িকে ঘিরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা। এর মাধ্যমে হারিয়ে যায় সাগরলতাও। ফলে ধীরে ধীরে সমুদ্রতীর ভাঙনের শিকার হয়ে হাজার হাজার একর ভূমি সাগরে বিলীন হয়ে যায়।  গত প্রায় ৩ দশকে কক্সবাজার সৈকতের ৫০০ মিটারের বেশি ভূমি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে।


জানা যায়, মাত্র এক দশক আগেও কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সৈকতজুড়ে গোলাপি-অতিবেগুনি রঙের ফুলেভরা সৈকতে এক অন্যরকমের সৌন্দর্যময় পরিবেশ ছিল।
কক্সবাজারের দরিয়ানগরে সাগরলতা নিয়ে সীমিত আকারে গবেষণা করেন বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক। তিনি বলেন, সৈকতের পরিবেশ পুনরুদ্ধারে সাগরলতার বনায়ন ও সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমরা। যা প্রকৃতি এখন আপন মনে গড়ে নিচ্ছে।


তিনি বলেন, করোনার নিষেধাজ্ঞার এই সুযোগটাকে পরিবেশগত পুনর্গঠনে কাজে লাগাতে হবে। সাগরলতা ও বালিয়াড়ি সংরক্ষণ করলে সাগরতীর রক্ষা করা সম্ভব হবে।


এফএস/ এমএইচ/ বাংলাবার্তা