চবিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

চবি প্রতিনিধি:

যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়েছে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ৯.৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চত্বর অনুষ্ঠিত হয় ‘ভাষা আদালন ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলাচনা সভা। আলাচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।

উপাচার্য সভাপতির বক্তব্যে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য আলোকপাত করে বলেন, ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে রক্তবীজ রোপিত হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য ও প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে বিভিন্ন সংগ্রাম ও আন্দোলন এবং সর্বোপরি ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে স্বদেশ ভূমিতে প্রতিষ্ঠা পায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তাই একুশ আমাদের ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত এক উজ্জ্বল দিন। মাতৃভাষার সুরক্ষা, বিকাশ এবং অনুশীলন ছাড়া কোন জাতি অগ্রসর হতে পারে না। মাতৃভাষা বাংলাকে সঠিকভাবে হৃদয়ে ধারণ-লালন ও চর্চার মাধ্যমে সর্বস্তরে বাংলাভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করে বিশ্ব দরবারে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলেই ভাষা শহীদদের প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন পূর্ণতা পাবে বলে উপাচার্য অভিমত ব্যক্ত করেন। নতুন প্রজন্মের সন্তানদের একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাংলাকে হৃদয়ের গভীরে এবং মমত্ববোধ থেকে ধারণ করার আহবান জানান।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) জনাব কএ এম নুর আহমদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর এস এম সালামত উল্যা ভূইয়া, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মোঃ জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী, সিনেট সদস্য প্রফেসর এ বি এম আবু নোমান, সিন্ডিকট সদস্য প্রফেসর ড. মো. মহীবুল আজিজ, শহীদ আবদুর রব হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. এ কে এম মাঈনুল হক মিয়াজী, সংগীত বিভাগের সভাপতি প্রফেসর সুকান্ত ভট্টাচার্য, অফিসার সমিতির সভাপতি রশীদুল হায়দার জাবেদ, চবি. ক্লাব (ক্যাম্পাস ও শহর)-এর পক্ষে ক্লাব (ক্যাম্পাস)-এর সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল-আমীন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, চবি’র সভাপতি প্রফেসর ড. মো. রাশেদ-উন-নবী, চবি কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. আবদুল হাই। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য) দিবাকর বড়য়া।

সকালে চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পন করে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন, চবি শিক্ষক সমিতি, অনুষদ সমূহের ডিনবৃন্দ, হল সমূহের প্রভোস্টবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতি এবং ইনষ্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, চবি অফিসার সমিতি, চ.বি. ক্লাব (ক্যাম্পাস ও শহর), চ.বি. মহিলা সংসদ, সমন্বয় কর্মকর্তা বিএনসিসি, চবি কর্মচারি সমিতি, কর্মচারি ইউনিয়ন, চবি ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ, চবি সাংবাদিক সমিতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফ্রন্ট, সনাতন ধর্ম পরিষদ, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, আদিবাসী ছাত্রসংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে সকাল ৮.১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্মরণ’ চত্বর হতে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গান পরিবেশনের মাধ্যমে চবি উপাচার্যের নেতৃত্বে শোক র্যা লি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালিটি চবি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চবি উপাচার্য। সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্মরণ চত্বর থেকে কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রভাতফেরি অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রভাতফেরি শেষ হয়।

এ ছাড়াও কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবন ও হলসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
.