বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের সিংহ পুরুষ। যার ডাকে নিপাত গিয়েছিল মৌলবাদ চক্র। চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সেই চট্টলবীর খ্যাত আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ৭৬ তম জন্মদিন কাল রোববার।
দীর্ঘ ৭৪ বছরের সংগ্রামী জীবনে রয়েছে নানা অর্জন। কাজ করেছেন গরীব-দুঃখী মেহনতি মানুষের জন্য। এ মানুষগুলো তাকে তেমনই ভালবাসতেন। যেমন তিনি তাদের আদর্শিক নেতা। যার অনুপ্রেরণা পেলাই তারা দুর্বারগতিতে এগিয়ে যেতেন।
জানা যায়, ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন এমিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ১৯৪৪-২০১৭ সাল প্রায় সাড়ে সাত দশক। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পিতার নাম মরহুম হোসেন আহমদ চৌধুরী আর মাতা মরহুম বেদুরা বেগম। আট ভাইবোনের মাঝে মহিউদ্দিন চৌধুরী মেজ। পিতা চাকরি করতেন আসাম বেঙ্গল রেলওয়েতে। পিতার চাকরির সুবাদে মহিউদ্দিন পড়াশোনা করেছেন মাইজদি জেলা স্কুল, কাজেম আলি ইংলিশ হাই। স্কুল জীবনে ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি।
স্কুল জীবন শেষে ভর্তি হন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ডিপ্লোমা শেষ না করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। এর আবার চলে যান কমার্স কলেজে। সেখান থেকেও চলে এলেন সিটি কলেজে। সিটি কলেজে থেকেই শুরু রাজনৈতীক জীবনের । পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে চট্টলবীর অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। তিনি স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে চট্টগ্রামে স্বয়ং জান্তা প্রধানকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। একানব্বইয়ের ঘুর্ণিঝড়ে দুস্থ জনতার পাশে দাঁড়িয়ে, অসহযোগ আন্দোলনে খালেদার সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে, গরিব-দুঃখি-শ্রমিকের অধিকারের কথা বলে মহিরুহে পরিনত হন আজকের মহিউদ্দীন।
১৭ বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরমধ্যে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের মেয়র নির্বাচনে তিনি ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন মন্ত্রীকে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন।
স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন ও দুই ছেলে তিনি মেয়ে নিয়ে ছিল তাঁর পরিবার। তাঁর বড় ছেলে মুহিবুল হাসান নওফেল দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে নওফেল বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের মানুষের প্রিয় নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী হঠাৎ করে না ফেরার দেশে চলে যান। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লাখ লাখ মানুষের প্রিয় এই নেতা।
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘির ময়দানে ১৫ ডিসেম্বর শুক্রবার আসরের নামাজের পর লক্ষ জনতার অংশগ্রহণে জানাজার নামাজের পর ঐতিহ্যবাহী শেখ ফরিদ (রা.) জামে মসজিদ চশমা হিলে তাঁর বাবার কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হন। নগরজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।