ড. গিয়াস উদ্দীন তালুকদার
সতর্কতামূলুক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাঃ মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ইসলাম গুরুত্ব প্রদান করে। এ কারণে আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো, (সূরা নিসা: ৭১) হাদিসে শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূল (সঃ) বলেন, তোমার ওপর তোমার শরীরেরও অধিকার রয়েছে, (বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৮)
♦আতংকিত না হয়ে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হওয়া: কেননা আল্লাহর হকুম ছাড়া কোন বিপদ আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না। তিনি বলেন আল্লাহ যা আমাদের জন্য লিপিবদ্ধ করেছেন তা ছাড়া কোন কিছুই আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আল্লাহর উপড় মুমিনের নির্ভরশীল হওয়া উচিৎ।” (সূরা আত্ তাওবা, ৫১) ♦লক ডাউন: যে এলাকায় মহামারি আক্রান্ত হয় সে এলাকায় প্রবেশ ও বাহির বন্ধ করে দেয়া। এ সম্পর্কে রাসূল (সঃ) বলেন “যদি তোমরা শুনতে পাও কোন জনপদে প্লেগ বা অনুরুপ মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তবে তোমরা তথায় গমন করবে না।আর যদি তোমরা যে জনপদ অবস্থান করছো তথায় তার প্রাদুর্ভাব ঘটে তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।( বুখারী, হাদীস নং ৫৩৯৬)
♦আইসোলেশন ( Isolation) : মহামারী রোধে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে পৃথক রাখাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আইসোলেশন বলা হয়। রাসূল (সঃ) এ সম্পর্কে ঘোষনা করেছেন, অসুস্থের কাছে নেয়া হবে না। (বুখারী, ৫৭৭১ ও মুসলিম, ২২২১)
♦হোম কোয়ারেন্টাইন (guarantine): সুস্থ ব্যাক্তি মহামারীতে আক্রান্তের আশংকায় জনবিচ্ছিন্ন থাকাকে কোয়ারেন্টাইন বলা হয়। বিভিন্ন হাদীসে এভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার ফযিলতল বর্ণিত হয়েছে। যেমন নবীজি (সঃ) বলেন কোন বান্দা যদি মহামারী আক্রান্ত এলাকায় থাকে এবং নিজ বাড়িতে ধৈর্য সহকারে সওয়াবের নিয়তে এ বিশ্বাস বুকে নিয়ে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তাকদিরে যা চূড়ান্ত রেখেছেন তার বাইরে কোনো কিছু তাকে আক্রান্ত করবে না, তাহলে তার জন্য রয়েছে শহীদের সমান সওয়াব। ( বুখারী, ৩৪৭৪ ও মুসনাদে আহমদ, ২৬১৩৯)
♦মুসাফাহ ও কোলাকুলি এড়িয়ে চলা: কেননা এর মাধ্যমে সংক্রামণের ভয় থাকে। নবীজি (সঃ) সাকিফের প্রতিনিধি দলের মধ্যকার কুষ্ঠ রোগীকে হাতে হাতে বাইয়াত না দিয়ে লোক মারফত বলে পাঠান, তুমি ফিরে যাও। আমি তোমার বাইয়াত নিয়ে নিয়েছি। ” ( মুসলিম, ২২৩১)
সার্বিক পরিচ্ছন্ন থাকা: কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মুমিনদেরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। “আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন। ” সূরা আল-বাকারা, ২২২), হাদীসে পবিত্রতাকে ঈমানের অংগ বলা হয়েছে। শরীয়াতের বিভিন্ন বিধানকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম নির্ধারণ করা হয়েছে:
♦ওজুর মাধ্যমে মানুষের শরীরের অনাবৃত্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা হয়:♦মেসওয়াকের মাধ্যমে মুখের সব ধরনের জীবানু ধ্বংস হয়: ♦সামগ্রিকভাবে সর্বক্ষণ ও বিশেষত সালাতের পরিধেয় কাপড় পরিচ্ছন্ন থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে,। আল্লাহ বলেন: “”” তোমরা কাপড় পরিস্কার রাখো। ” (আল-মুদ্দাচ্ছির, ৪)
♦গুজবে কান না দেয়া ও গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকা: ইসলামে যাচাই ছাড়া কোন তথ্য গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন,” কোন অসমর্থিত ব্যক্তি কোন খবর দিলে তোমরা তা যাচাই করো। (সূরা আল- হুজুরাত: ৬) এ সমপর্কে রাসূল (সঃ) বলেন, যাচাই না করে শোনা খবর বিশ্বাস করা মিথ্যুক হওয়ার নামান্তর। ” ( মুসলিম, ৫)
♦ ঘরে নামায আদায় করা: আপদকালীন অবস্থায় রাসূল (সঃ) সাহাবীগণকে বাড়িতে নামায আদায়ের নির্দেশ দেন। তিনি মুআজ্জিনকে আজানের মধ্যে বলতে বলেন, আলা সাল্লু ফী রিহালিকুম” (তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে নামায আদায় কর) ( বুখারী ৬৬৬, মুসলিম ৬৯৭) তাঁর ইন্তিকালের পরে সাহাবীগণও একইভাবে আমল করতেন। সহীহ বুখারীতে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) থেকে এর প্রমাণ বর্ণিত হয়েছে যে তিনি মুয়াজ্জিনকে নির্দেশ দেন আজানের “সাল্লু ফী বুয়ূতিকুম” (তোমরা বাড়ীতে সালাত আদায় কর) অংশটি যোগ করার জন্য। (বুখারী ৬৬৮, মুসলিম ৬৯৯) ইসলামী শরীআর উদ্দেশ্য ও মহামারীর গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় মিসর, সৌদীআরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ফিকহ কমিটি ও ইসলামী ফাউন্ডেশন মসজিদে মুসল্লাীদের উপস্থিতি সর্বনিম্ম পর্যায়ে নিয়ে আসার পক্ষে মত দিয়েছেন। বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রীও সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে সকলকে ঘরে ইবাদাত করার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
♦ গরিব-আসহায় ও নিম্ম আয়ের লোকদের সাহায্যে এগিয়ে আসা: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘোষিত লকডাউনের এ দিনগুলোতে গরিব- অসহায় ও নিম্ম আয়ের মানুষের প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করা বিত্তবানবানদেরওপর আবশ্যক। এ মহৎ গুণের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন, “অথবা খাদ্য দান করা দুর্ভিক্ষের দিনে,ইয়াতীম আত্মীয়-স্বজনকে,অথবা ধুলামলিন মিসকীনকে ।”( সূরা আল-বালাদ,১৪-১৬)
♦ভাইরাস প্রতিরোধে ও জনগণের নিরাপত্তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম সরকার জনকল্যাণের বিবেচনায় কোন নির্দেশনা দিলে এবং তা শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক না হলে তা মান্য করা অপরিহার্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর আনুগত্য করো রাসূলের ও তোমাদের নেতৃস্থানীয়দের। ” (সূরা আন-নিসা, ৫৯) এ সময়ে আমাদের উচিৎ বেশি বেশি (১) তওবা, (ইস্তেগফার, (৩) নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামায, (৪) কুরআন তিলাওয়াত, (৫) নফল রোযা, (৬) তাহাজ্জুদ নামায ও (৭) রাসূলের (সঃ) এর দুরুদ পাঠ করা।
© প্রফেসর, আরবী বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।সদস্য, শরীয়াহ সুপারভাইজারী কমেটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক।
এমএম/ এমএইচ/বাংলাবার্তা