দেখেছো কি খাড়াদাঁড়া তীরগতি কর্কট বিচ্ছু?/লজ্জার পর্দাটা নাই ছিঁড়ে ফেলো যদি/বৃশ্চিক-লগ্নের জানবে না কিচ্ছু।/ কবিতার এমন কথামালার গাঁথুনি দিয়ে শুরু হয় আবৃত্তি একাডেমির ৫৯তম প্রযোজনা বৃশ্চিক লগ্ন। মৃন্ময় মিজানের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হয় প্রযোজনাটি। আবৃত্তি শিল্পীদের আবৃত্তির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়, বর্তমান সমাজ-সংসার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক। নানা ব্যঙ্গাত্মক ও রসালো কথায় ইঙ্গিত করা হয় সমাজের নানা অসঙ্গতি। ব্যতিক্রমি এই আবৃত্তি প্রযোজনায় আবৃত্তির পাশাপাশি ছিল কোরিওগ্রাফি ও গান।
প্রযোজনায় অংশ নেন, আবৃত্তি শিল্পী মৃন্ময় মিজান, হিমাদ্রী মোর্শেদ তাহমিনা, আব্দুর রহমান তিতুমীর, আব্দুস সালাম, মো. ইসহাক আলী, হাসান মাহমুদ, হাসনাইন আনজুম, রওনক জাহান সাথী, সালাহউদ্দিন জামিল সৌরভ, হাফসা মাহমুদ, সুস্মিতা দত্ত, জান্নাতুল ফেরদৌস মিলা, তাহমিনা সুলতানা লিজা ও তাজরী-মিন শিমুল।
আবৃত্তি প্রযোজনা শেষে সনদপত্র প্রদান করা হয়, বিভিন্ন কর্মশালার উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। এছাড়া বছরের সেরা আবৃত্তি সংগঠক, সেরা নিয়মিত সদস্য, সেরা আবৃত্তিকর্মী ও প্রতিশ্রæতিশীল আবৃত্তিশিল্পীকে বিশেষভাবে পুরুষ্কৃত করা হয়।
আবৃত্তি একাডেমির সাবেক পরিচালক মাসুদ আহম্মেদের সভাপতিত্বে প্রযোজনা পরবর্তী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যজন অধ্যাপক ড. ইনামুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যান রামচন্দ্র দাস ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল।
উচ্চারিত প্রতিটি কথা হোক শিল্প’-এই শ্লোগানকে ধারণ করে আবৃত্তি একাডেমির পথচলা দুই দশকেরও অধিক সময় ধরে। ইতোমধ্যে সংগঠনটি দেশের আবৃত্তি দলগুলোর মধ্যে উলেখ করবার মত একটা জায়গা করে নিয়েছে। ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সংগঠনটির দু’দিনব্যপী উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। ওদিন দিলসাদ জাহান পিউলীর গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হয় আবৃত্তি একাডেমির ৫৮তম প্রযোজনা রুদ্ধশ্বাসের দিনগুলো। ৫৮তম প্রযোজনায় আবৃত্তি শিল্পীদের আবৃত্তির মাধ্যমে স্মরণ করা হয় ১৯৭১ সালের জগন্নাথ হলের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। আবৃত্তি করা হয় শহীদ জননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলো, রুদ্র মুহাম্মদ মুহাম্মদ শহীদুলার কনসেন্ট্রশন ক্যাম্প ও ড. রণ পেরী’র যুদ্ধশিশুসহ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস স্মরণে বিভিন্ন কবিতা ও গল্প।
৫৮তম প্রযোজনায় অংশ নেন আবৃত্তি শিল্পী মৃন্ময় মিজান, মাসুদ আহম্মেদ, সারমিন ইসলাম জুঁই, শামীম আহসান, আহম্মেদ শুভ, হিমাদ্রী মোর্শেদ তাহমিনা, আব্দুর রহমান তারেক, আব্দুস সালাম, মো. ইসহাক আলী, হাসনাইন আনজুম, মো. আল-আমিন, জান্নাতুল ফেরদৌস মিলা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট আবৃত্তিজন অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারীকে আবৃত্তি একাডেমি পদকে ভূষিত করা হয়। তিনি তাঁর এই পদক আবৃত্তি চর্চা যারা করেন, তাদের সবাইকে উৎসর্গ করেন। আবৃত্তি একাডেমির পরিচালক মৃন্ময় মিজানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহ্কাম উলাহ।