১ মে- আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। মে দিবস হিসেবে এই দিনের পরিচিতি বেশি। মে দিবস এলেই অনেকেই শ্রমিকদের অধিকার আদায় নিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। সভা সেমিনার করেন। মালিক-শ্রমিক এক কাতারে বসে পরস্পরের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা বিনিময়ের কথা বলেন। দিন শেষে সব যেন অন্তসার শূন্য।
মে দিবসের অনুষ্ঠানে মালিক পক্ষের বা শ্রমিক পক্ষের যারা অতিথির আসনে থাকেন, রাতের বেলায় দেখা যায়, তাদের অনেকেই বাসায় ফিরে গিয়ে কাজের বুয়াকে ছোট নজরেই রাখেন। অন্তত এই একটা দিনে কেউ বাসার কাজের লোক, ড্রাইভার, দারোয়ান বা মালিদেরকে সাথে নিয়ে এক টেবিলে বসে পরিবার নিয়ে খাওয়া দাওয়া করেন না।
এর অর্থ হলো, জাত ধনী বা গরীব থেকে ধনী হওয়া পরিবারের অনেকেই শ্রমিকদের সত্যিকারে ভালোবাসেন না। বেশীরভাগই মনে করেন, শ্রমিক যা টাকা চাইছেন- তা তো দিয়েছিই; আবার এত ভালোবাসার কি আছে!
আবার অনেক শ্রমিক তো কাজের বিনিময়ে সঠিক পারিশ্রমিক পান না। না পান, ভালো ব্যাবহার। অন্যদিকে শ্রমিক নেতাদের কেউ কেউ মালিক পক্ষের সাথে আঁতাত করে, নিজেরা গাড়িতে চড়ে বেড়ালেও সাধারণ শ্রমিকের ভাগ্য সহজে খুলে না। অযোগ্যতার দোহায় দিয়ে সাধারণ হাজার হাজার শ্রমিক এখনো সরকারি শ্রমনীতির বাইরে বেতন পায়। আর এসব নিম্ন আয়ের শ্রমিকেরা এত আইন-কানুন জানেও না, বুঝেও না। তারপরেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে মাসের পর মাস শ্রমিকদের বেতন বকেয়া থাকে। অনেক শ্রমিক পায় না ঈদের বেতন বোনাস।
এর কারণে দেশজুড়ে সাড়া বছর শ্রমিক অসন্তোষ চলতেই থাকে কোনো না কোনো স্থানে। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়, ধনীরা তাদের অধীনস্থ কাজের মানুষ তথা উনাদের প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করে তাদেরকে আগে ভালোবাসতে শিখুক। সম্মান দিতে শিখুক, তাতেই শুভ পরিবর্তন আসবে দেশে। এর জন্যে কখনো সমাজতন্ত্র কায়েমের দরকার পরবে না। অবশ্য বাংলাদেশেও অনেক ধনী ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে উদাহরণ হয়ে, যারা তাদের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের খুব সমাদর করেন। এই শিল্পপতিদের দেখেও অন্তত দেশের অন্য ধনীরা শ্রমজীবী মানুষকে ভালোবাসতে শিখুক, এটাই কামনা করি মে দিবস তথা বিশ্ব শ্রমিক দিবসে।