চট্টগ্রামে চিকিৎসার অভাবে আওয়ামীলীগ নেতার মৃত্যু

106
মোহাম্মদ হোসেন
বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন মোহাম্মদ হোসেন
সোহরাব সাহল:
 

হাসপাতাল কতৃপক্ষের ভুলের কারণে বিনাচিকিৎসায় মারা গেলেন চট্টগ্রামের এক ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানান সমালোচনা। বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ হোসেন। তিনি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

 
হার্টে সমস্যা থাকার কারণে বেশকিছুদিন ধরে হাসপাতালে রোগী। হাসপাতাল কতৃপক্ষের পরামর্শে রোগীকে বাড়ি নিয়ে যান স্বজনেরা। তখনও রোগীর তেমন উন্নতি হয়নি। রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে সকালে আবার নিয়ে আসা হয় একই হাসপাতালে। মূমুর্ষ অবস্থায় দুই ঘণ্টা ধরে রোগীকে ভর্তি নেয়নি তারা। এক পর্যায়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগেই তার মৃত্যু হয়।
 
আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর পার্ক ভিউ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। এর আগেও তারা এই রোগীকে ভর্তি নেয়নি প্রথমে। পরবর্তীতে এক সাবেক ছাত্রনেতার হস্তক্ষেপে রোগী ভর্তি নেয় কর্তৃপক্ষ।
 
মোহাম্মদ হোসেনের ভাতিজা ইসহাক ইমন বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় আমার চাচাকে পার্কভিউ হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাই। রাতে ওনার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে আজ সকাল ৭ টার দিকে আবার পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু এবার তারা রোগী ভর্তি নেয়নি।
 
দুই ঘণ্টা ধরে তারা রোগীকে দেখতেও আসেনি। এক পর্যায়ে ডাক্তার আশরাফ এসে বলে উনি করোনা সাসপেক্টেড। আইসিইউ লাগবে। এরপর বলে একবার ৪ তলায় যান, আবার বলে ৮ তলায় যান। এভাবে করতে করতে রোগী মারাই গেল। ’
 
তিনি আরও বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও তারা আমার চাচাকে ভর্তি নেয়নি। পরে নুরুল আজিম রনি ভাইয়ের হস্তক্ষেপে তারা ভর্তি নেয়। ’
 
জানা যায়, গত ১৫ জুন বুকের ব্যথা নিয়ে মোহাম্মদ হোসেন নামের এ রোগী নগরীর কাতালগঞ্জস্থ পার্ক ভিউ হাসপাতালে সিট না দেওয়ার অভিযোগ নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনিকে কল করেন রোগীর স্বজনেরা। সেদিনই তার হস্তক্ষেপে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রোগীকে। এরপর এই রোগী সুস্থ হলে ২০ জুন বাড়ি চলে যায়। পরবর্তীতে ২৬ জুন পুনরায় অসুস্থ হলে এই রোগীকে আবারো পার্ক ভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় রোগীকে রিলিজ করলে আত্মীয়রা বাড়ি নিয়ে যায়।
কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোরে পুনরায় এই রোগী বুকের ব্যথা অনুভব করলে পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সকাল ৭টা থেকে দুই ঘণ্টা উক্ত রোগীকে ইমার্জেন্সিতে রাখলেও হার্টের কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। উল্টো বুধবার সন্ধ্যায় রিলিজ হওয়া এই হার্টের রোগীকে করোনা উপসর্গের রোগী বলে হাসপাতালের দায়িত্বরতরা চিকিৎসাদানে বিরত থাকেন। পরবর্তীতে বুকের ব্যথায় কাতর এই রোগী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। ’
 
এ বিষয়ে জানতে সিএমপির উপ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। স্বজনরা অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিব। ‘
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নূরুল আজিম রনি বলেন, সব সময় চেয়েছি নিজের সবটুকু দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু দেশের কিছু মানুষের টাকার কাছে পরাজিত। তারা মানুষের জীবনের মূল্যের চেয়ে টাকাকে বেশি মূল্যবান মনে করে। হাসপাতালগুলো রোগীদের সাথে এমন আচরণে আমরা খুবই মর্মাহত। আমি মনে করি প্রশাসন অবশই এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবে।

এসএস/এমএইচ/বাংলাবার্তা